পৌষের প্রথম দিনে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়, আছে ঝলমলে রোদ
পৌষের প্রথম দিনে আজ শনিবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। উত্তরের এই জনপদে দিন দিন নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। রাতভর উত্তরের হিমেল বাতাসে অনুভূত হয় কনকনে শীত। তবে আজ সকালে দেখা মিলেছে ঝলমলে রোদের।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় তেঁতুলিয়ায় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ।
পঞ্চগড় জেলা শহরের রিকশাচালক জমিরুল ইসলাম বলেন, ‘রাতিত খুব কুয়াশা ছিল। সকালে রোদ উঠিচে, কিন্তু টেম্পার নাই। শিলশিল একখান বাতাস বহচে। ওই বাতাসখানে ঠান্ডাখান বাড়াচে।’
আজ সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে হালকা কুয়াশার মধ্যে গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছুটছেন গন্তব্যে। এরই মধ্যে সকাল আটটার দিকে পূর্ব আকাশে উঁকি দিতে থাকে সূর্য। ধীরে ধীরে উঠতে থাকে ঝলমলে রোদ। তবে উত্তরের ঝিরিঝিরি বাতাস বইতে থাকায় দিনের বেলাও অনুভূত হচ্ছে শীত। কোনো কোনো এলাকায় শীতের সকালে শিশুদের নিয়ে বাড়ির বাইরে রোদে বসেছেন অভিভাবকেরা। আবার কেউ কেউ খড়কুটো জ্বালিয়ে করেন শীত নিবারণের চেষ্টা।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আকাশে কুয়াশা ও মেঘের পরিমাণ কমে যাওয়ায় উত্তরের হিমেল বাতাস অব্যাহত আছে। এ জন্য সকালে সূর্যের দেখা মিললেও হিমেল বাতাসে রোদের তীব্রতা ছড়াতে পারছে না। এতে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়াটা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের লক্ষণ। এখন থেকে ধীরে ধীরে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও কমতে থাকবে। সেই সঙ্গে এই মাসের শেষ দিকে এ অঞ্চলে মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
হেমন্তের শেষ দিন গতকাল শুক্রবার পঞ্চগড়ে দিনের বেলা হিমেল বাতাসের সঙ্গে ছিল ঝলমলে রোদ। দিনভর রোদ থাকলেও শীতল বাতাসে সূর্যের তীব্রতা ছড়াতে না পারায় প্রায় সারা দিনই অনুভূত হয় শীত। ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে বাড়তে থাকে ঘন কুয়াশার দাপট। রাতভর বৃষ্টির মতো টিপটিপ করে কুয়াশা ঝরার পর আজ সকাল থেকে তা কমতে শুরু করে। তবে উত্তরের হিমেল বাতাসে দিনের বেলাও অনুভূত হচ্ছে শীত। এক সপ্তাহ ধরেই পঞ্চগড়ে অনুভূত হচ্ছে কনকনে শীত। দিন দিন কাবু হয়ে পড়ছেন এলাকার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। শীতের কষ্ট বাড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষের।
আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে সদর উপজেলার তালমা নদীতে বালু তুলতে যাচ্ছিলেন শ্রমিক রফিকুল ইসলাম (৪২)। হাফিজাবাদ এলাকায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হামেরা (আমরা) প্রত্যেক দিন সকালে নদীত বালু উঠাবা (তুলতে) যাই। কয়দিন আগোত যে কুয়াশা তারপরও এনং ঠান্ডা আছিলনি (ছিল না)। দুই দিন তকা (থেকে) কুয়াশা নাই, সকালে রোদ উঠেচে, কিন্তু পানিত নামিলে ঠান্ডাখানোত হাত-পাওলা মনে হচে ককড়া হয় আচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড়ে শীতার্ত মানুষের মধ্যে ইতিমধ্যে সরকারিভাবে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ শুরু হয়েছে। সরকারিভাবে ২০ হাজার কম্বল বরাদ্দ এসেছে, যা পাঁচটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।