যশোরে ভাঙা সেতুর স্থানে স্বেচ্ছাশ্রমের সাঁকো, স্বস্তি ২০ হাজার মানুষের

যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নের সংযোগস্থল ভৈরব নদের ডাকাতিয়া এলাকার সেতু ভেঙে পড়েছে। সেখানে স্বেচ্ছাশ্রমে সাকো নির্মাণ করছেন স্থানীয় লোকজন। গত শুক্রবার তোলাছবি: প্রথম আলো

কেউ বাঁশ কেটে নিয়ে আসছেন। কেউ বাঁশ দা দিয়ে দুই ভাগ করে ফেলছেন। আবার কেউবা বাঁশ মাটিতে গর্ত করে পুঁতছেন। এরপর পাতা হচ্ছে বাঁশ। এভাবে উৎসাহ–উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি করা হচ্ছে বাঁশের সাঁকো। গত শুক্রবার যশোর সদর উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রামে গিয়ে এই দৃশ্য চোখে পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন যেখানে সাঁকো নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে একটি পাকা সেতু ছিল। প্রায় এক মাস আগে অতিবৃষ্টিতে ১০০ বছর পুরোনো সেতুটি ভেঙে পড়ে। এতে বিপাকে পড়েন সদর উপজেলার কাশিমপুর ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ২০ হাজার মানুষ। সেতু না থাকায় তাঁরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছিলেন। খবর পাওয়ার পরও এলজিইডি, ইউনিয়ন পরিষদ বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান সেতুটি সংস্কার করার জন্য এগিয়ে আসেনি।

অবশেষে দুর্ভোগ লাঘবে গত শুক্রবার টাকা ও স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ শুরু করেন এলাকাবাসী। এখন বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে সাইকেল ও মোটরসাইকেল নিয়ে মানুষ চলাচল করছে।

যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নের সংযোগস্থল ভৈরব নদের ডাকাতিয়া এলাকার সেতু ভেঙে পড়েছে। সেখানে স্বেচ্ছাশ্রমে সাকো নির্মাণ করছেন স্থানীয় লোকজন। গত শুক্রবার তোলা
ছবি: প্রথম আলো

গত শুক্রবার দুপুরে ডাকাতিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি করা বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে মানুষ হেঁটে পারাপার হচ্ছেন। বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেলে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ কোনোরকমে সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে। এই সাঁকোর দৈর্ঘ্য ১৫ ফুট ও প্রস্থ ৪ ফুট।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নের সংযোগস্থল ভৈরব নদের ডাকাতিয়া এলাকার সেতু প্রায় এক মাস আগে ভেঙে যায়। সেতুটি সংস্কার না করায় ভৈরব নদের দুই পাড়ের ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারখানেক শিক্ষার্থী এই সাঁকোর ওপর দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ইসলাম সরদার বলেন, ‘কাশিমপুর ইউনিয়নের ২২টি গ্রামের মধ্যে ডাকাতিয়া, কনেজপুর, বিজয়নগর, কাশিমপুর, এনায়েতপুর, কিফায়েতনগর, শ্যামনগর, নওদাগ্রাম, ওসমানপুর ও সালতা গ্রামের মানুষের যশোর শহরে যাতায়াতের একমাত্র পথ এই ডাকাতিয়া সেতু। এ ছাড়া নওয়াপাড়া ইউনিয়নের বোলপুর, নওদাগ্রাম, পাগলাদাহ ও মধুগ্রামের মানুষের কাশিমপুর ইউনিয়নে যাওয়ার একমাত্র পথ এটি। সেতুটি ভেঙে পড়ায় মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অন্তত ২০০ ফুট চওড়া ভৈরব নদের ওপর মাত্র ১৫ থেকে ২০ ফুট দীর্ঘ ডাকাতিয়া সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। নদের দুই পাড়ে আড়াআড়ি মাটি দিয়ে ভরাট করে কালভার্টের মতো ওই সেতু নির্মিত হয়েছিল। ফলে ভৈরব নদের পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কবে ওই সেতু নির্মিত হয়, তা কেউ জানাতে পারেননি। তবে গ্রামবাসীর দাবি, ১০০ বছরের বেশি ওই সেতুর বয়স। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নদের সঙ্গে দৈর্ঘ্য–প্রস্থ ঠিক রেখে এবার নতুন সেতু নির্মাণ করতে হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুব রহমান বলেন, ‘ভৈরব নদের ওপরে ডাকাতিয়া এলাকায় নতুন একটি সেতু নির্মাণের জন্য এলজিইডি প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানান তিনি।