জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের মারধরে প্রথম আলোর সাংবাদিক আহত

পুলিশের মারধরে আহত প্রথম আলোর সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুন। আজ বুধবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় প্রথম আলোর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে মারধর করেছে পুলিশ। আজ সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ বুধবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের সদস্যরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়েন। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। নতুন কলাভবনের সামনে থেকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আহত সাতজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গাড়িতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছিল। এ সময় গাড়িটি থামান পুলিশের সাত-আটজন সদস্য। এরপর তাঁরা গাড়ির জানালা দিয়ে ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীদের এলোপাতাড়ি ঘুষি ও শটগান দিয়ে আঘাত করেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ওই সময় ঘটনাস্থল কলাভবনের কাছে দাঁড়িয়ে কোটা সংস্কারের আন্দোলন নিয়ে প্রতিবেদন করার জন্য তথ্য সংগ্রহ করছিলেন মামুন। শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনা দেখতে পেয়ে সেখানে তিনি ছুটে যান। তিনি শিক্ষার্থীদের মারধর করার ভিডিও ধারণ করতে গেলে পুলিশ সদস্যরা তাঁকে বাধা দেন। মামুনসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক নিজেদের পরিচয় দেওয়ার পরও পুলিশের এক সদস্য বুট দিয়ে মামুনের পা চেপে ধরেন। পরে তিনিসহ পুলিশের আরও সাত-আটজন সদস্য এলোপাতাড়ি ঘুষি ও শটগান দিয়ে মামুনকে আঘাত করেন। পরে অন্য সাংবাদিকেরা তাঁকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব পালন করছিলাম। হঠাৎ একটি গাড়ি থামিয়ে গাড়ির ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের মারধর করতে দেখি কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে। ওই গাড়িতে করে আগেও বেশ কয়েকবার আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নিতে দেখেছি। মারধরের বিষয়টি দেখতে পেয়ে সেখানে গিয়ে ভিডিও করতে গেলে পুলিশ সদস্যরা বাধা দেন। পরিচয় দেওয়ার পরও মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাঁরা ছুড়ে ফেলে দেন। একজন আমার পা বুট দিয়ে চেপে ধরেন। এ সময় আরও ছয়-সাতজন এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও শটগান দিয়ে মারধর করেন। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. শামছুর রহমান বলেন, মামুনের মাথার একটি অংশ সামান্য কেটে গেছে। এ ছাড়া তিনি ঘাড়ে, পিঠে ও পায়ে আঘাত পেয়েছেন।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) ও পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মো. আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। এ বিষয়ে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।