যমুনার ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব যমুনাপারের ১৫০ পরিবার
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা গ্রামে যমুনা নদীর বাঁধ ভেঙে বসতঘর ও সহায়–সম্বল হারিয়ে এখন নিঃস্ব দেড় শতাধিক পরিবার। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রায় ৫০০ মিটার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর তাঁরা পাশের আরেকটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে খাবার ছাড়াও বিশুদ্ধ পানির সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তাঁরা।
আজ শুক্রবার পর্যন্ত দুর্গত পরিবারের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। দুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণসহায়তা হিসেবে ১০ কেজি চালসহ আট ধরনের সামগ্রীর একটি করে প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাছেদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার যমুনার স্রোতের তোড়ে পুরোনো বাঁধের প্রায় ৫০০ মিটার অংশ ধসে যায়। এতে বাঁধের ওপর ঘর তুলে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেওয়া দেড় শতাধিক পরিবার সবকিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০০ পরিবার। আশ্রয়শিবির না থাকায় দুর্গত মানুষ পাশের নতুন বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। আজ পর্যন্ত দুর্গত ৩০০ পরিবারের জন্য ১০ কেজি চাল, সয়াবিন তেল, ডালসহ আট ধরনের ত্রাণসামগ্রীর প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। দুর্গত মানুষের জন্য ১০টি টিউবওয়েল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত এসব টিউবওয়েল বসানো হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঁধ ভাঙার বর্ণনা দেন ইছামারা গ্রামের আবদুল মজিদের স্ত্রী রুমিয়া বেগম। তিনি বলেন, যমুনার কোল ঘেঁষে পুরোনো বাঁধে এক যুগ ধরে বসবাস করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে হঠাৎ নদীতে ভয়াল গর্জন। আচমকা স্রোত আছড়ে পড়ে তীরে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাঁধ ধসে স্রোতের তোড়ে টিনের বেড়ার ঘর, ঘরের আসবাব, চাল-ডাল, বিছানা-বালিশ সবকিছুই ভেসে গেল। কোনো রকমে সাঁতরে খালি হাতে আরেকটি বাঁধে আশ্রয় নেন।
একই এলাকার লাকি বেগম বলেন, ‘হঠাৎ বাঁধ ভাঙে যমুনার ঢলত সবকিছু ভাসে গেচে। রান্না করবার এক মুঠো চালও নেই। খালি হাতে বাঁধত আসে উঠচি। এটি আসে খোলা আকাশত রাত কাটাচ্চি। চিয়ারমিনের কাছ থ্যাকে এক ব্যাগ ইলিপের চাল পাচি, সেই চাল সিদ্ধ করে শাক দিয়ে ভাত রান্না করে খাচ্চি।’
ইছামারা গ্রামের শামসুল মণ্ডল বলেন, ‘বাঁধ ভাঙে এক পলকেই সব ম্যাচাকার হয়্যা গেল। সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বাঁধত আসে উঠচি। এটি খাওয়ার কষ্ট, থাকার কষ্ট, পানির কষ্ট, টয়লেটের কষ্ট।’
ইছামারার বাসিন্দা নায়েব আলী বলেন, পুরোনো বাঁধে দেড় শতাধিক পরিবার বসবাস করত। বাঁধ ভেঙে সবাই এখন নিঃস্ব। যমুনায় বসতঘর হারানোর পর এক যুগ ধরে তাঁরা বাঁধের ওপর ঘর তুলে বসবাস করছিলেন। আচমকা সব শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, পরিবারের চার-পাঁচজন সদস্য। ত্রাণের ১০ কেজি চাল দুই দিনেই শেষ। এখন পরিবারের এতগুলো মানুষ নিয়ে কীভাবে বাঁচবেন?
ইছামারা গ্রামের রাশেদা বেগম বলেন, ‘আচমকা যমুনার বাঁধ ভেঙে পানি আছড়ে পড়ল ঘরে। চোখের সামনে ভেসে গেল যত্নে গড়া ঘর, গরু-ছাগল। কোনো রকমে সাঁতরে কিনারে উঠে জান বাঁচালাম।’
বেবি বেওয়া (৬০) বলেন, ‘চাল-ডাল, বিছানা-বালিশ কিছুই নাই। সব হারিয়ে বাঁধত আসে উটচি। এটি ভাতের কষ্ট, থাকার কষ্ট, রান্নার কষ্ট। বিয়ানবেলা টয়লেট করতে লাইন ধরা লাগে।’
সারিয়াকান্দির ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, যমুনা নদীর বাঁধ ভেঙে বসতঘর হারানো দুর্গত মানুষ পাশের আরেকটি বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্গত মানুষের জন্য তাৎক্ষণিক ত্রাণসহায়তা বিতরণ করা হয়েছে।