রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামে কোনো আসন বরাদ্দ নেই। এরপরও তাঁরা দুজনসহ অন্তত ৭০ জনের বেশি নেতা-কর্মী অবৈধভাবে হলের কক্ষ দখল করে থাকছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই হলে কৃষ্ণ রায় নামের এক শিক্ষার্থীকে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাইম আলীর নেতৃত্বে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। কক্ষ দখলের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, তাঁরা বৈধভাবে সিট পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু প্রাধ্যক্ষ ছাত্রলীগকে হলে সিট বরাদ্দ দিচ্ছেন না।
গত রোববার রাতে কৃষ্ণ রায় নামের এক ছাত্রকে হলকক্ষে আটকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের হল শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. নাইম আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমানসহ ছাত্রলীগের সাত থেকে আটজনের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন কৃষ্ণ রায়। অভিযোগে হল থেকে বের করে দিতে নির্যাতনের পাশাপাশি ওই শিক্ষার্থীকে শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। নির্যাতন ও হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম।
এ ঘটনায় গতকাল বুধবার বিকেলে হল থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। কমিটির আজ থেকে তদন্তের কাজ শুরু করার কথা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. নিয়াজ মোর্শেদ হলের ৩২৭ নম্বর কক্ষে এবং সাধারণ সম্পাদক হলের ৩৭৬ নম্বর কক্ষে থাকেন। এ ছাড়া হল শাখা অনেক নেতা-কর্মীর হলে সিট নেই। হল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে হল প্রশাসন সিট বরাদ্দ দেয়। সে সময় ৪৪ জনকে হলে তোলার চেষ্টা করে প্রশাসন। তবে ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে ২০ শিক্ষার্থীকে হলে সিট দিতে পারে প্রশাসন। এবারও হল প্রশাসন আসন বরাদ্দের নোটিশ দিয়েছে। হলে ইতিমধ্যে ১১৭টি সিট খালি হয়েছে। তবে কার্যত সেগুলোর বেশির ভাগই ছাত্রলীগের দখলে রয়েছে। এর মধ্যে হলের ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারাও রয়েছেন।
হলে আসন দখল করে থাকার ব্যাপারে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাইম আলী বলেন, এই প্রাধ্যক্ষ বিএনপিপন্থী। তিনি ছাত্রলীগকে সিট বরাদ্দ দেন না। তিনিসহ ৫০ জনের বেশি হলে সিট পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু তিনি সিট দিচ্ছেন না।
হল ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, তিনি ইতিমধ্যে হলে সিট পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এ নিয়ে হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথাও হয়েছে। তিনি এখন রাজশাহীর বাইরে আছেন। এসেই সিটের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হল প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী হলে সিট খালি হয়েছে ১১৭টি। এগুলোর প্রায় সব কটি দখলে রয়েছে। ছাত্রলীগের কারও সিটের জন্য তিনি কোনো আবেদন পাননি। তবে তাঁদের কেউ কেউ হঠাৎ যোগাযোগ করা শুরু করে দিয়েছেন। তিনি হলে নিয়ম অনুযায়ীই সিট বরাদ্দ দেবেন।