কক্সবাজারে বুদ্ধপূজার মধ্য দিয়ে সাংগ্রাইয়ের প্রস্তুতি শুরু
কক্সবাজারের রাখাইনপল্লিতে সাংগ্রাই (নববর্ষ) উদ্যাপনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। গতকাল রোববার বিকেলে শহরের টেকপাড়া ও চাউলবাজার রাখাইনপল্লি থেকে এ উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে রাখাইন নারীরা শহরের প্রাচীন বৌদ্ধমন্দির ‘অগ্গামেধা ক্যাং’–এ যান। সেখানে বুদ্ধমূর্তি স্নানের মাধ্যমে শুরু করেন নববর্ষ উদ্যাপনের প্রস্তুতি। আজ সোমবারও মন্দিরটিতে বুদ্ধপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সকাল থেকে অগ্গামেধা ক্যাং প্রাঙ্গণে রাখাইন নারী-পুরুষের ভিড় ছিল। সবাই যে যাঁর মতো বুদ্ধপূজা দিয়ে বছর শেষ করতে চাইছিলেন। আগামীকাল মঙ্গলবার রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে রাখাইন অব্দ ১৩৮৫। পুরোনো অব্দকে বিদায় এবং নতুন ১৩৮৬ অব্দকে বরণ করে নেবেন এই সম্প্রদায়ের অব্দ অব্দ লোকজন। নতুন বছরের আগমন উপলক্ষে ১৭ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী সাংগ্রাই বা জলকেলি উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
জলকেলির জন্য শহরের টেকপাড়া, চাউলবাজার, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, বড়বাজার, চৌফলদণ্ডী, খুরুশকুল, মহেশখালী, টেকনাফ, হ্নীলা, রামু, চকরিয়া, হারবাংসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে শত শত মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে তরুণ-তরুণীরা মণ্ডপে দাঁড়িয়ে একে অপরকে মঙ্গলজল ছিটিয়ে আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়বেন। দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা মণ্ডপ ঘুরে রাখাইনদের বর্ষবরণ ও বিদায়ের এই জলকেলি উৎসব উপভোগ করবেন। জলকেলি উৎসব আনন্দময় ও উৎসবমুখর করতে সহযোগিতা দিচ্ছে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
কেন্দ্রের পরিচালক ও রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মং চেং হ্লা প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর শহরের ১২টিসহ টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী, রামু, চৌফলদণ্ডী, চকরিয়ায় ৩৩টি মণ্ডপে সাংগ্রাই উৎসব হয়েছিল। এবার ৪২টির বেশি মণ্ডপে জলকেলি উৎসব হতে পারে। জেলার ৪০ হাজার রাখাইন তিন দিনের এই জলকেলিতে মেতে উঠবেন। আজ দুপুরে শহরের অগ্গামেধা ক্যাং প্রাঙ্গণে কথা হয় রাখাইন তরুণী চয়েন ফ্রুর সঙ্গে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঙ্গলজল দিয়ে বুদ্ধস্নান সারেন। চয়েন ফ্রু বলেন, রাখাইন নারী-পুরুষেরা মন্দিরে এসে বুদ্ধস্নানের মাধ্যমে সামনের বছর দুর্দশা থেকে মুক্তিলাভের প্রার্থনা করছেন।
রাখাইন সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতা ও কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাথিং অং প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাখাইন অব্দের ১৩৮৫–কে বিদায় এবং নতুন ১৩৮৬ অব্দকে বরণ করে নিতেই মূলত ‘সাংগ্রাং পোয়ে’ অথবা জলকেলি উৎসব আয়োজিত হয়ে আসছে। হিংসা–বিদ্বেষ ভুলে দেশের উন্নতিতে সব সম্প্রদায়ের মানুষ যেন একযোগে কাজ করতে পারেন এবং সবাই যেন সুখে–শান্তিতে বসবাস করতে পারেন, এ জন্য আমরা সমবেত কণ্ঠে মঙ্গল প্রার্থনা করব।’