নাটোরে আচরণবিধি ভেঙে সংসদ সদস্যের মোটর শোভাযাত্রা, যানজটে ভোগান্তি
নাটোর শহরে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেছেন নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এ সময় নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাওয়া হয়। পরে অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশও করেন সংসদ সদস্য।
মঙ্গলবার বিকেল চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত চলা শোভাযাত্রার কারণে শহরে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সাধারণ মানুষ ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে সংসদ সদস্যের বক্তব্য না পাওয়া গেলেও অনুসারী এক নেতা দাবি করেছেন, শোভাযাত্রার কারণে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়নি।
সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার ১৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী এলাকায় বা অন্য কোথাও কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বা মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী কাজে সরকারি প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার, সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের ব্যবহার বা সরকারি যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন না এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ বা ব্যবহার করতে পারবেন না।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘোষণার আগে থেকেই ঢাকায় অবস্থান করছিলেন সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম। গত রোববার তাঁকে আবার নাটোর-২ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। আজ বিকেলে তিনি নাটোর আসেন। বিকেল চারটায় ফুলে ফুলে সজ্জিত খোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে তিনি নাটোর-ঢাকা মহাসড়কের পূর্ব বাইপাসে আসেন। সেখান থেকে অন্তত ৫০০ মোটরসাইকেল নিয়ে তিনি শোভাযাত্রা শুরু করেন। এ সময় নৌকা প্রতীকখচিত খোলা ট্রাকে কর্মী-সমর্থকেরা বাজনার তালে তালে স্লোগান দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, শোভাযাত্রাটি প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করে শহরের কানাইখালী কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে আসতে আধা ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। এ সময় শোভাযাত্রার কারণে সড়কে যানজট তৈরি হয়। মসজিদের সামনে সংসদ সদস্যকে নেতা-কর্মীরা সংবর্ধনা দেন। এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট চান। পরে কান্দিভিটুয়ায় দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শোভাযাত্রা শেষ করা হয়। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরীসহ সংসদ সদস্যের অনুসারী নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেওয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, সংসদ সদস্যের আগমনে আবেগাপ্লুত হয়ে কর্মী-সমর্থকেরা তাঁকে বরণ করেছেন। তাঁরা সড়কে যান চলাচলে কোনো বাধা দেননি। তবু সাময়িকভাবে কেউ কষ্ট পেলে তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করছেন। শোভাযাত্রার কারণে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবু নাসের ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা রাজশাহীতে একটি সভায় ছিলেন। বিষয়টি তিনি জানতেন না। পরে শোভাযাত্রা করার বিষয়টি শুনেছেন। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে তাঁরা কঠোর অবস্থানে আছেন। এ ব্যাপারে প্রার্থীদের সতর্ক করা হবে।
এদিকে শোভাযাত্রা চলাকালে প্রায় এক ঘণ্টা শহরের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শোভাযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সাধারণ পরিবহন দাঁড় করিয়ে রাখতে দেখা যায়। মাদ্রাসা মোড়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমি প্রায় ১০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি। ট্রাফিক পুলিশ আমাকে প্রধান সড়কে উঠতে দিচ্ছে না। শোভাযাত্রায় শত শত প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও খোলা ট্রাক ধীরগতিতে প্রধান সড়ক অতিক্রম করছে।’
পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ও রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনের একটি সভায় অংশ নিতে রাজশাহীতে ছিলাম। মোটর শোভাযাত্রার কথা কেউ আমাকে বলেননি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’