জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ১৫টি পদের ১৪টিতেই ‘সমঝোতা’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে বেশির ভাগ পদ ভাগাভাগি হয়েছে। ফলে আগামীকাল বুধবার সমিতির নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে মাত্র একটি পদে ভোটাভুটি হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সময় (২০২৩ সাল) বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ফলে গত বছর অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের আগে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ (উপাচার্যবিরোধী) ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ ব্যানারে নতুন সংগঠন করে। এরপর নির্বাচনে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সঙ্গে মিলে ‘শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’ ব্যানারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের আরেক অংশ বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদের’ নাম বদলে ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ দেওয়া হয়। ফলে আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে শুধু ‘শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’ এবং কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন।

নির্বাচনের চূড়ান্ত মনোনয়ন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সভাপতি পদে অধ্যাপক সোহেল রানা, কোষাধ্যক্ষ পদে মাসুম শাহরিয়ার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ রায়হান শরীফ, নির্বাহী সদস্য পদে আবু সাইদ মো. মুনতাকিমুল বারী চৌধুরী, আমিনুর রহমান খান, নাহিদ আখতার, বোরহান উদ্দিন, মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তাঁরা সবাই বিএনপিপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।

অন্যদিকে সহসভাপতি পদে অধ্যাপক মো. এমরান জাহান, নির্বাহী সদস্য পদে খো. লুৎফুল এলাহী, আমিনা ইসলাম, মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান, মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন, মো. আবদুস সবুর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা সবাই আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। তবে নির্বাচনে আবদুস সবুর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

শিক্ষক সমিতির ১৫টি পদের মধ্যে শুধু সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। এ পদে মোট তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে অধ্যাপক আইরিন আক্তার এবং অধ্যাপক মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। অন্যজন অধ্যাপক মো. কবির উদ্দিন সিকদার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন।

এ বিষয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের শিক্ষক পরিষদের’ সদস্যসচিব খো. লুৎফুল এলাহী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগের নির্বাচনে আমরা শিক্ষক ঐক্য পরিষদ প্যানেল থেকে অংশগ্রহণ করি। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় আমাদের আগের প্যানেল থেকে আলাপ-আলোচনা করে সমঝোতা হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর আমাদের পূর্বে যে দল (মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ) ছিল সেটির নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের শিক্ষক পরিষদ নাম দেওয়া হয়েছে এবং এটি লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিমুক্ত একটি সংগঠন।’

এদিকে ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের স্পষ্ট রূপরেখা ও হামলাকারী শিক্ষকদের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির নির্বাচন স্থগিত রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটির নেতারা বলেন, জাকসু নির্বাচন ব্যতীত শিক্ষক সমিতির মতো অন্য যেকোনো নির্বাচন আয়োজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা। এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানে হামলাকারী ও মদদদাতা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া শেষ না করে তাদের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া স্পষ্টত হামলাকারী শিক্ষকদের শিক্ষকদের পুনর্বাসন ও বৈধতা প্রদান।

এ বিষয়ে ‘শিক্ষক ঐক্য পরিষদের’ আহ্বায়ক অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে আমরা শিক্ষক ঐক্য পরিষদ থেকে আন্দোলন করেছিলাম। মূলত সেই ব্যানার থেকেই নির্বাচনে আমরা একসঙ্গে আছি।’ জাকসু নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের সমর্থন রয়েছে। প্রশাসনকে আমরা বলেছি, অতিদ্রুত জাকসু নির্বাচন নিয়ে রূপরেখা দিতে। শিক্ষকদের সম্মান শিক্ষকদের জায়গায় যেমন ঠিক, তেমনি জুলাই আন্দোলনে যেসব শিক্ষক অভিযুক্ত তাদেরও তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ শাস্তির দাবি করেছি।’