পকেটের মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে মিলেছে পিটুনিতে নিহত চরমপন্থী নেতার পরিচয়

নিহত শহীদ মোল্লা
ছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পশ্চিম উজানচর এলাকায় একটি নির্জন মেহগনিবাগানে চরমপন্থী এক নেতাকে পিটিয়ে জখম করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।

এর আগে বিকেল ৫টার দিকে তাঁকে পিটুনি ও কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির পকেটে থাকা মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে তাঁর পরিচয় পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিহত ব্যক্তির নাম শহীদ মোল্লা (৪৬)। তিনি পাবনার আমিনপুর থানার ঢালারচর ইউনিয়নের বড়দুর্গাপুর গ্রামের কানাই মোল্লার ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে পাবনার বেড়া, আমিনপুর ও রাজবাড়ী সদর থানায় একাধিক হত্যাসহ দ্রুত বিচার আইনে মামলা আছে। তিনি চরমপন্থী (সর্বহারা) দলের নেতা বলে পুলিশ জানায়।

গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, বারান্দায় একটি ট্রেতে লাশ রাখা। সেখানে গোয়ালন্দ ঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) উত্তম কুমার ঘোষ ও উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল আলম নিহত শহীদ মোল্লার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মুমূর্ষু অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে এনে ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি কৌশলে সটকে পড়েন। জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তুতিকালে ওই ব্যক্তি মারা যান। তাঁর কপাল, হাঁটু, পায়ের পাতাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। ধারণা করা হচ্ছে, অতিমাত্রায় অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঘটনাস্থল পশ্চিম উজানচর এলাকার নবুওসিমদ্দিনপাড়া। এই পাড়ার বাসিন্দা হবিবুর রহমানের মেহগনিবাগানে গতকাল রাত আটটার দিকে গিয়ে দেখা যায়, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রাণবন্ধু চন্দ্র বিশ্বাস একাধিক পুলিশ সদস্য নিয়ে ঘটনাটি খতিয়ে দেখছেন। হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) মুকিত সরকার ঘটনাস্থলে আসেন।

সেখানে আলাপকালে ওসি প্রাণবন্ধু চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, খবর পেয়ে তাঁরা রাতেই হাসপাতাল থেকে লাশ পুলিশি হেফাজতে নেন। নিহত ব্যক্তির পকেটে থাকা এক আইনজীবীর ফোন নম্বরের সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি হাতঘড়ি ও রক্তমাখা একটি বাঁশের মোটা লাঠি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির শরীরে হাতুড়ি পেটানোর অসংখ্য দাগ, কপাল ও পায়ে ক্ষতচিহ্ন আছে। নিহত শহীদ মোল্লার বিরুদ্ধে পাবনার বেড়া থানায় দুটি হত্যাসহ আমিনপুর ও রাজবাড়ী সদর থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা আছে।

ওসি আরও বলেন, নিহত শহীদ মোল্লা নিষিদ্ধ চরমপন্থী (সর্বহারা) দলের সক্রিয় সদস্য। দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ আজ রোববার সকালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্ত্রী বাদী হয়ে গতকাল রাতেই অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। আসামিদের ধরতে পুলিশ কাজ শুরু করছে।