ভারতে পালানোর সময় ইসহাক আলী খানের মৃত্যুর খবর, নিশ্চিত নয় বিজিবি–পুলিশ
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইসহাক আলী খান পান্না (৬০) ভারতে পালানোর সময় মারা গেছেন বলে খবর বেরিয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুরের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত খবর ও ছবি-ভিডিও ছড়ায়।
আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেনি। স্বজনেরাও মৃত্যুর খবর পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু কোথায়, কীভাবে মারা গেছেন, নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গতকাল শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে লন্ডন থেকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ফেসবুক লাইভ করেন। তখন তিনি ইসহাক আলী খান পান্নাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন।
জানতে চাইলে আজ বিকেলে হোয়াটসঅ্যাপে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে ইসহাকের আলী খানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘তাঁকে (ইসহাক) হত্যা করা হয়েছে।’ তবে কোথায়, কবে এবং কারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
ইসহাক আলী খান পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া গ্রামের প্রয়াত নেছার আলী খানের ছেলে। তিনি ১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তবে ১৪-দলীয় জোটের কারণে তাঁকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল।
ইসহাকের ভাগনে ও কাউখালীর চিড়াপাড়া পার সাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লাইকুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, ‘মামার মৃত্যুর খবর শুনেছি। এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারছি না। তিনি সিলেটের পথে ভারতে গেছেন এটুকুই জানি।’
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ইসহাক আলী ঢাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। পরে তিনি ভারতে পালানোর উদ্দেশ্যে সিলেটে যান। গতকাল শনিবার ভোর চারটার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল সীমান্ত দিয়ে তিনি মেঘালয়ের ডাউকি এলাকায় যান। তখন বিএসএফ তাঁকে ধাওয়া করলে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান।
ইসহাকের মৃত্যু নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে দুটি খবর ছড়িয়েছে। প্রথমটি হলো গত শুক্রবার রাতে ইসহাক আলী সিলেটের কানাইঘাট বা গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পাড়ি দেন। সেখানে একটি পাহাড় পার হওয়ার সময় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অন্য সংবাদটি হচ্ছে, তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
ইসহাকের মৃত্যুর বিষয়টি পুলিশ বা বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) নিশ্চিত করতে পারেনি। বিজিবির সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক (অপারেশন) মেজর রাশেদ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অসমর্থিত কিছু সূত্র থেকে তথ্যটি (ইসহাকের মৃত্যু) পেয়েছি। তবে এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এটি আমরা নিশ্চিত নই।’
জানতে চাইলে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমার কাছে এমন কোনো তথ্য নেই।’
গতকাল সন্ধ্যার পর ইসহাক আলীর মরদেহের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে স্বজন ও দলীয় নেতা-কর্মীরা শোক প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড পেজ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। ইসহাকের স্বজন ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জসিম উদ্দিন খান বলেন, ‘ইসহাক আলী খান গোয়াইনঘাটের তামাবিল হয়ে ভারতে যাওয়ার সময় ডাউকি এলাকায় মারা যান। তাঁর মৃত্যুর ছবি পেয়েছি। দুই দিন আগে তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল।’