কুমিল্লায় চুরিতে বাধা দেওয়ায় গাড়িচাপায় কলেজছাত্রী হত্যার এক মাস পর গ্রেপ্তার ২
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে গরু চুরির সময় বাধা দেওয়ায় কলেজছাত্রী ফারজানা আক্তার ওরফে পিংকীকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের এক মাস আট দিন পর গতকাল রোববার রাতে চোরচক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের পরিকোট গ্রামের মো. ইউনুসের ছেলে মো. বখতিয়ার জসীম (৩২) এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আমানপুর গ্রামের খালপাড় এলাকার প্রয়াত কাবিল মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া (৩৫)।
নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে ফজলুল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশ গতকাল রোববার রাতে চট্টগ্রাম, ফেনী ও নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আন্তজেলা গরু চোরচক্রের ওই দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত ১৮ অক্টোবর বেলা দেড়টার দিকে এলাকার পুরুষদের সবাই জুমার নামাজে ব্যস্ত ছিলেন। এমন সময় নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট নতুন বাজার এলাকায় সংঘবদ্ধ একটি চোরচক্র প্রাইভেট কারে তুলে একটি বাছুর চুরি করে পালাচ্ছিল। বিষয়টি টের পেয়ে প্রথমে বাধা দেন ফারজানার মা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চোরেরা তাঁকে মারধর করে। মায়ের চিৎকারে ছুটে এসে গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ান ফারজানা আক্তার। একপর্যায়ে চোরেরা ওই তরুণীকে প্রাইভেট কার চাপা দিয়ে হত্যা করে বাছুরটি নিয়ে পালিয়ে যান।
ফারজানা আক্তার রায়কোট গ্রামের নতুন বাজারসংলগ্ন এলাকার আবদুল কাদেরের মেয়ে। তিনি উপজেলার বাঙ্গড্ডা বাদশা মিয়া আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীর ছিলেন। পরদিন আবদুল কাদের বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজনকে আসামি করে মামলা করেন।
ওসি এ কে ফজলুল হক বলেন, ‘ঘটনাস্থলে কোনো সিসি ক্যামেরা ছিল না। আমরা ঘটনাস্থলের আশপাশের কয়েকটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে সংগ্রহ করি। এরপর পালিয়ে যাওয়া গাড়িটি দেখা গেলেও নম্বর বোঝা যাচ্ছিল না। তবে ঘটনার পর থেকেই পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তৎপর ছিল। অবশেষে দীর্ঘ তদন্ত ও চেষ্টার পর প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা চোরচক্রকে শনাক্ত করতে সক্ষম হই। বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিরা সোমবার বিকেলে কুমিল্লার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।’
জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই গরু চুরি করে আসছিলেন। ঘটনার দিন ওই প্রাইভেট কারে চক্রটির চারজন সদস্য ছিলেন। তাঁরা গাড়ি চলন্ত অবস্থায় রেখেই বাছুরটি চুরি করে পালাচ্ছিলেন। ফারজানা আক্তার তাঁদের গাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় নিজেদের বাঁচাতে মেয়েটিকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যান। এরপর পাশের পেরিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে চোখ বাঁধা অবস্থায় চুরি করা বাছুরটি ফেলে চলে যায়। ওসি বলেন, চক্রটির অপর দুই সদস্য এবং গাড়িটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারসহ গাড়িটি উদ্ধার করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
ফারজানা আক্তারের বাবা আবদুল কাদের বলেন, ‘আমাদের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে পিংকী সবার বড়। পিংকী ছিল অত্যন্ত মেধাবী ও সাহসী। ভেবেছিলাম কয়েক মাস পর মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেব। কিন্তু এর আগেই সব শেষ করে দিল। আমরা খুনিদের ফাঁসি চাই।’