কুড়িগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ

কুড়িগ্রাম জেলা বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলার শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুরে কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের প্রথম সারির সংগঠকদের বাদ দিয়ে দলছুট, অনুপ্রবেশকারী, বহিরাগত ও আন্দোলনে অংশ না নেওয়া অছাত্রদের দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলার কমিটি গঠন করার অভিযোগ উঠেছে। এ কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে কুড়িগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রামের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

এর আগে জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জড়িত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমবেত হন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে আন্দোলনকারী বিভিন্ন শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন।

বক্তারা বলেন, বর্তমানে কেন্দ্র থেকে দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি সম্পূর্ণ অযাচিত ও অযৌক্তিক। এই কমিটি শিবিরের আদলে তৈরি করা এবং কমিটি তৈরিতে হস্তক্ষেপ করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আতিক মুজাহিদ। ফলে শিবিরের রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত ব্যক্তিরা কমিটির মূল মূল পদে স্থান পেয়েছেন। এ ছাড়া শিবিরের অনেকে যাঁরা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন তাঁরা ও অন্য ছাত্রলীগের সদস্যরা বিভিন্ন পদ লাভ করেছেন। তাঁরা অতীতে আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করেছেন।

বক্তারা দাবি করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটির কুড়িগ্রামের আহ্বায়ক আবদুল আজিজ ওরফে নাহিদ ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ছাত্রশিবিরের কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ শাখার অফিস–বিষয়ক সম্পাদক পদে রয়েছেন। তিনি জুলাই গণ–অভ্যুত্থান আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন না।

আন্দোলনে নামতে অস্বীকৃতি জানানো শিক্ষার্থীরা এখন কমিটিতে স্থান পেয়েছেন উল্লেখ করে সমাবেশে আরও বলা হয়, কুড়িগ্রামে অবস্থান করেননি, এমনকি বিদেশে অবস্থান করেছেন এমন ব্যক্তি ও শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন এমন অছাত্রদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি গঠনের সময় শিবিরের ও ছাত্রলীগের ব্যক্তিরা মূল মূল দায়িত্বে থাকছেন সংবাদ জেনে প্রকৃত আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রকে অবহিত করেছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটিতেও তাঁদের লোকজনের সহায়তায় মূল আবেদনকারীদের বাদ দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়। তাই আন্দোলনকারী সব শিক্ষার্থী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটিকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

আজ সমাবেশে অংশ নিয়ে সদ্য ঘোষিত কমিটিতে স্থান পাওয়া দুই সদস্য শিপন সরকার ও আশরাফুল আলম তাৎক্ষণিক পদত্যাগ করেছেন। পরে তাঁদের বক্তব্যে ওই দুই ছাত্র আন্দোলন কর্মী অবিলম্বে এই কমিটি বাতিল করে যাচাই–বাছাইয়ের পর প্রকৃত আন্দোলনকারীদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করার দাবি জানান।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির সংগঠক কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের শিপন সরকার, আশরাফুল আলম, কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আল আকসা সৌখিন, কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের নাজমুস সাকিব শাহী, কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বর্ষণ বেনজির, জান্নাতুল ফেরদৌস প্রমুখ।

অভিযোগের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুড়িগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আবদুল আজিজ নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার অতীত মতাদর্শ আলাদা হতেই পারে, কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর আমি সম্পূর্ণভাবে ছাত্রদের অধিকারের জন্য কাজ করেছি। বর্তমানে আমার যাঁরা সহযোদ্ধা আছেন, তাঁরা জানেন আমি কেমন। আর বর্তমানের কমিটি করার পেছনে আমাদের কোনো হাত নেই। কেন্দ্র থেকেই এই কমিটি দেওয়া হয়েছে।’