বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় বাসায় ঢুকে গৃহবধূ উম্মে সালমাকে (৫০) হত্যার পর লাশ ফ্রিজে রাখার ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা হলেন ওই বাসার ভাড়াটে মাবিয়া সুলতানা ও সুমন রবিদাস।
দুই দিনের রিমান্ড শেষে রোববার সন্ধ্যায় দুই আসামিকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে হাজির করলে তাঁরা জবানবন্দি দেন। বিচারক বেগম সুমাইয়া সিদ্দিকা তাঁদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। বগুড়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুপচাঁচিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুব্রত কুমার সিংহ বলেন, আসামি মোসলেম উদ্দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। একই আদালত মাবিয়া ও সুমনের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। রিমান্ড শেষে আজ তাঁদের আদালতে হাজির করলে তাঁরাও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ ছাড়া র্যাব-১২-এর বগুড়া ক্যাম্পের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে সালমার ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজুরকে গ্রেপ্তার করেন। তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সাদ দাবি করেছেন, তিনি মায়ের হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন।
১০ নভেম্বর দুপুরে চারতলা বাড়ির তিনতলার একটি ফ্ল্যাটের রেফ্রিজারেটর থেকে সালমার লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি দুপচাঁচিয়া ডিএস ফাজিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আজিজুর রহমানের স্ত্রী। তাঁরা ভবনটির মালিক। সালমাকে হত্যায় জড়িত সন্দেহে ঘটনার পরদিন তাঁদের ছোট ছেলে সাদকে (১৯) আটক করে র্যাব। ওই দিনই দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব-১২-এর বগুড়া ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মো. এহতেশামুল হক খান দাবি করেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন সাদ। কিন্তু তদন্তে ভিন্ন তথ্য পেয়ে সালমাদের বাসার ভাড়াটে মাবিয়া সুলতানা, সুমন রবিদাস ও মোসলেম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, আসামি মোসলেম শুক্রবার আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন, আজ সুমন ও মাবিয়া স্বীকারোক্তিতে অভিন্ন তথ্য দিয়েছেন।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিন আসামি বলেছেন, চারতলার ভাড়াটে মাবিয়া সুলতানার বাসায় বিভিন্ন লোক যাতায়াত করতেন। এতে বিরক্ত হয়ে সালমা মাবিয়াকে বাসা ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মোসলেম ও সুমনকে নিয়ে সালমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মাবিয়া। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সালমাকে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে রেখে প্রধান ফটকে তালা দিয়ে চলে যান আসামিরা। সালমার বাসার চাবি রেখে দেন মাবিয়া। আর ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া মুঠোফোন, ইন্টারনেট–সেবায় ব্যবহৃত রাউটার মোসলেম নিজের কাছে রাখেন।