ভেড়ামারায় জাসদ নেতার ভাইকে হত্যার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

অবরুদ্ধ তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে বিজিবি। শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চণ্ডিপুর গ্রামেছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় পুলিশের বিরুদ্ধে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) স্থানীয় এক নেতার ভাইকে হত্যার অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চণ্ডিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশ পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে পুলিশের ভাষ্য, মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে ওই ব্যক্তি সেতু থেকে লাফ দিয়ে পড়ে মারা গেছেন।

এ ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্যকে মারধর করে স্থানীয় বাজারের একটি দোকানের ভেতর তালা লাগিয়ে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। এ সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।

বিক্ষুব্ধ লোকজন পুলিশের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চণ্ডিপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

নিহত ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম দুদু (৪৫)। তিনি একই গ্রামের আজিজ মণ্ডলের ছেলে। তাঁর ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক। আর নিহত রফিকুল জাসদের সমর্থক ছিলেন।

নিহত রফিকুলের ছোট ভাই জাসদ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই রফিকুল কোনো মামলার আসামি নয়। কোনো মামলার ওয়ারেন্টও দেখাতে পারেনি পুলিশ। তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি এবং অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাঁদগ্রামে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের প্রধান খালের ওপর ৪ নম্বর সেতুর কাছে রফিকুলের চায়ের দোকান। গতকাল সন্ধ্যার দিকে ভেড়ামারা থানা–পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সালাউদ্দীন কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়ে এলাকায় অভিযান শুরু করেন। এ সময় পুলিশের ভয়ে রফিকুল ইসলাম দৌড়ে পাশের সেতুর ওপর চলে যান। একপর্যায়ে রফিকুল সেতু থেকে লাফ দেন। পুলিশ সেখানে ধাওয়া করে তাঁকে আটক করে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয় বাসিন্দারা রফিকুলকে উদ্ধার করে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ও জাসদের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া দেন। একপর্যায়ে তিন পুলিশ সদস্যকে ধরে বাজারের একটি দোকানে আটকে রাখেন তাঁরা। এ সময় পুলিশের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিজিবি ও অন্য পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরুদ্ধ তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়েছিল। ঘটনাস্থলে খুবই ব্যস্ত আছি। এই মুহূর্তে এর বেশি কথা বলা সম্ভব নয়।’

কুষ্টিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (ভেড়ামারা সার্কেল) আবদুল খালেক বলেন, তিন পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কেন পুলিশ সেখানে গিয়েছিল, সেটার তদন্ত চলছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযানে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

শোকাহত স্বজনেরা। শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চণ্ডিপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় বাসিন্দা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম স্বপন প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ রফিকুলের দোকান ঘিরে ধরে। এ সময় ভয়ে তিনি দৌড়ে ব্রিজের ওপর চলে যান। ব্রিজ থেকে নিচে লাফ দেন। পরে পুলিশ সদস্যরা তাঁর বুকের ওপর ওঠেন। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। উত্তেজিত লোকজন পুলিশ সদস্যদের ঘিরে ধরেন। কয়েকজনকে মারধর করেন। তিন পুলিশ সদস্য দোকানে আশ্রয় নেন।

নিহত ব্যক্তির লাশ হাসপাতাল থেকে তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম। আর কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সেখানে বিজিবি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনীও পাঠানো হচ্ছে।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, তিন ঘণ্টা পর অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে কী হয়েছিল, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করা হচ্ছে।