ময়মনসিংহে বৃক্ষমেলায় ক্রেতা কম, বিক্রেতাদের লোকসানের শঙ্কা

ময়মনসিংহ নগরের টাউন হল মাঠে চলছে বৃক্ষমেলাছবি: প্রথম আলো

নানা প্রজাতির ফুল, ফল আর ঔষধি গাছের পসরা নিয়ে বসেছেন ৬০ বছর বয়সী জালাল উদ্দিন। তবে দেখা নেই কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার। ময়মনসিংহ নগরের টাউন হল মাঠে বিভাগীয় বৃক্ষমেলায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেলা একটা পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকার গাছ বিক্রি করেছেন তিনি। জালাল উদ্দিনসহ অন্য বিক্রেতারা অভিযোগ করেছেন, কারফিউয়ের কারণে মেলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্রেতার উপস্থিতি নেই। ফলে তেমন বেচাবিক্রিও হচ্ছে না।

১৪ জুলাই শুরু হওয়া এই মেলা শেষ হবে ২৮ জুলাই। এবারের মেলায় মোট ৩০টি স্টল বসেছে। এতে ময়মনসিংহ শহর, সদর ছাড়াও আশপাশের উপজেলা থেকে নার্সারির মালিকেরা বিভিন্ন গাছের পসরা সাজিয়েছেন।

অন্তত ৪০ বছর ত্রিশাল উপজেলার দরিল্ল্যা গ্রামে নার্সারির ব্যবসা করেন জালাল উদ্দিন। এবার ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন ও ময়মনসিংহ বন বিভাগের আয়োজনে শুরু হওয়া বৃক্ষমেলায় একটি স্টলের বরাদ্দ নিয়েছেন তিনি। আগেও ওই মেলায় একাধিকবার স্টল পেতেছেন, কিন্তু এবারের মতো পরিস্থিতি দেখেননি কখনো। তিনি বলেন, কারফিউ চলার কারণে মেলায় ক্রেতারা আসতে পারছেন না। এর মধ্যে অবার বেচাকেনার সময়ও কমিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কথা বলার একপর্যায়ে দুহাত তুলে মোনাজাত করতে দেখা যায় জালাল উদ্দিনকে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে চাইছি দেশটা ঠান্ডা করে দেন, আমাদের বেচাকেনা ভালো করে দেন। দেশ ঠান্ডা হলেই মেলায় মানুষ আসবেন।’

জালাল আরও বলেন, ‘মেলায় প্রায় দুই লাখ টাকার গাছ এনেছিলাম। ভেবেছিলাম, বিক্রি ভালো হবে। কিন্তু ২ থেকে ৪ হাজার টাকার বেশি কোনো দিন বিক্রি হয়নি। ছাত্র আন্দোলন ও কারফিউয়ের কারণে মানুষ বের হতে পারেন না। তাই ক্রেতাও কম। যদি স্বাভাবিক অবস্থা থাকত, তবে দিনে ১৫-২০ হাজার টাকার গাছ বিক্রি করতে পারতাম। মেলার সময় না বাড়ালে অবস্থা খুবই খারাপ হবে।’

সদর উপজেলার রামপুর পূর্ব পাড়া এলাকায় পপি নার্সারিতে বাবার গাছের ব্যবসা দেখাশোনা করেন কলেজছাত্র সারোয়ার হোসেন। আজ মেলা চত্বরে দেখা হয় তাঁর সঙ্গে। মেলায় আসা কয়েকজন দর্শনার্থীকে তিনি নিজের দোকানের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সারোয়ার বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে লোকজন মেলায় আসেন না। প্রচারও কম হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকলে বিক্রি ভালো হতো। গত বুধবার পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। যদি স্বাভাবিক থাকত, তাহলে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা বিক্রি হতো।

সারোয়ার আরও বলেন, বিকেল থেকে লোক মেলায় আসতেন, কিন্তু তখন থেকেই কারফিউ চলে। এ কারণে বিক্রি নেই। এবার লস গুনতে হবে।

ঘুনশিল্পী নার্সারির মালিক ইকবাল হাসান একজন কর্মীকে নিয়ে বসে অলস সময় পার করছেন। তাঁর দোকানেও কোনো ক্রেতা নেই। তিনি বলেন, দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। এ কারণে মেলায় লোক কম। প্রায় ২০০ বেশি প্রজাতির গাছ নিয়ে বসলেও মেলার শুরু থেকে আজ সকাল পর্যন্ত মাত্র ১৫ হাজার টাকার গাছ বিক্রি হয়েছে, কিন্তু দর্শনার্থী থাকলে প্রায় দেড় লাখ টাকা বিক্রি হতো।

কথা হয় গাছ কিনতে আসা কাঁচিঝুলি এলাকার বাসিন্দা রাহেলা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘টাউনহল মোড় ঘিরেই ছাত্র আন্দোলন চলছিল। তারপর কারফিউ। এ কারণে আগে মেলায় আসিনি। কারফিউ শিথিল হওয়ায় কয়েকটি গাছ কিনতে এসেছি।’

ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আবদুল ওয়াদুদ বলেন, চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মেলা ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক থাকলে মেলায় ২৫-৩০ লাখ টাকার গাছ বিক্রি হতো, কিন্তু এবার বিক্রি অনেক কম। তবে কারফিউ শিথিল থাকার সময় মানুষ এসে প্রয়োজনীয় গাছ কিনে নিয়ে যেতে পারেন।