আপনি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিলেন কীভাবে?
গোলাম সরোয়ার: আমি একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই বড় হয়েছি। স্কুলজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছি। গত বছরও আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। পরে তা পরিবর্তন করা হয়েছে। এবার আমাদের দলীয় সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এই সুযোগ নিয়েছি। এখানে দল আমাকে যতবার যত কিছু দিতে চেয়েছে, ততবার স্থানীয় আধিপত্যবাদী একটি চক্র তা অন্যায়ভাবে কেড়ে নিয়েছে। আমাকে বঞ্চিত করেছে। এমনকি আমাকে লাঞ্ছিতও করেছে। বরগুনার সাধারণ মানুষ এবার ভোট দিয়ে এই অন্যায়ের নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বরগুনা-১ আসনে প্রায় ৩০ বছর সংসদ সদস্য ছিলেন ধীরেন্দ্র দেবনাথ। তাঁর বিপক্ষে আপনি জয়ী হয়েছেন। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
গোলাম সরোয়ার: আমার জীবনের সততা, ত্যাগ ও বিনয়ী রাজনীতিকে মানুষ পছন্দ করেছে। আমি সারা জীবন একটি আধিপত্যবাদী, দুর্নীতিবাজ, ভোগী ও পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এ জন্য আমাকে নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করতে হয়েছে। এবার মানুষ সুযোগ পেয়েছে। আমার এই দীর্ঘ লড়াইয়ে শামিল হয়ে আমার পরিবর্তনের ডাকে সাড়া দিয়ে আমাকে জয়ী করেছে। এটা মানুষ করেছে, এ জয় তাদেরই জয়। আধিপত্যবাদী অপরাজনীতির বিরুদ্ধে শুভশক্তির জয়।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও সাফল্যের পেছনে বিশেষ কারও অবদান আছে?
গোলাম সরোয়ার: সব অবদান সাধারণ মানুষের। বিশেষ কোনো নেতা বা ব্যক্তির প্রতি আমার ব্যক্তিগত আনুগত্য নেই। কারণ, আমি একটি সাধারণ পরিবারের সন্তান। অর্থবিত্ত বলতে খেয়েপরে থাকার মতো সামর্থ্যটুকুই আমার আছে। নির্বাচনে আমি কর্মীদের ঠিকমতো পকেটখরচ পর্যন্ত দিতে পারিনি। তবু মানুষ অর্থ–মোহকে উপেক্ষা করে আমাকে ভালোবেসেছে, সমর্থন দিয়েছে এবং ভোট দিয়ে জয়ী করেছে। মানুষের নিখাদ ভালোবাসা ছাড়া এটা অকল্পনীয় ছিল। এই সাফল্য সাধারণ মানুষের।
দলীয় প্রতীকের বাইরে আপনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এখন দলে এ নিয়ে বিভক্তি-বিভাজন আছে। ভবিষ্যতে আপনাদের রাজনৈতিক অবস্থান কেমন হবে?
গোলাম সরোয়ার: আমি দলের বিপক্ষে যাইনি। আমাদের সভাপতি এবার দলের সবার জন্য প্রার্থী হওয়ার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এখন দলের প্রতীক একটা। সেটি তো আর একাধিক ব্যক্তিকে দেওয়া যায় না। আমি দলীয় প্রধানের এই সিদ্ধান্তের সুযোগ নিয়েছি। দলের বিপক্ষে যাইনি। আমি দলের কর্মীদের মন জয় করে তাঁদের কাছে প্রমাণ করব, আমি একটি পরিচ্ছন্ন রাজনীতি চাই। আশা করি, আমার সাংগঠনিক দক্ষতা, উদার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সেটা আমি পারব। বিভেদ থাকবে না।
গত ৩০ বছর বরগুনায় একজন সংসদ সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন। আপনি নতুন সংসদ সদস্য হিসেবে কী কী কাজ করবেন, যা দৃষ্টান্ত হতে পারে?
গোলাম সরোয়ার: আমাদের অনেক স্বপ্ন, অনেক সমস্যা। রাস্তাঘাটা, অবকাঠামো, চিকিৎসা, শিক্ষা—সবদিক থেকেই আমরা পিছিয়ে আছি। মানুষের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কিছুই এখানে আমরা পাইনি। সংসদ সদস্যের ক্ষমতাকে সৎভাবে ব্যবহার করব। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ একটি আধুনিক জেলা করতে যা যা প্রয়োজন, তা করব। বরগুনায় মাদকের যে ভয়াবহতা, পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি বন্ধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করব।
আপনি তরুণ প্রজন্মের একজন নেতা। তরুণদের জন্য আপনার বিশেষ কোনো চিন্তা আছে কী?
গোলাম সরোয়ার: অবশ্যই আছে। বরগুনাকে ইয়াবা পাচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে পরিণত করে এখানে তরুণদের জীবন ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছিল। প্রথম কাজ এটা বন্ধ করা। তরুণদের দক্ষতা বাড়িয়ে তাঁদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা হবে আমার মূল চ্যালেঞ্জ।