চিন্ময় দাসের জামিন শুনানি এগিয়ে আনতে দ্বিতীয় দফায় আবেদন
জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি ধার্য দিনের আগে এগিয়ে আনতে দ্বিতীয় দফায় আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি নথিভুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার অবকাশকালীন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
এর আগে গত বুধবার একই আদালতে ওকালতনামা না থাকায় জামিন শুনানি এগিয়ে আনার করা আবেদন নাকচ করে দেন চিন্ময়ের আইনজীবী।
গত ৩১ অক্টোবর রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ফিরোজ খান নামের এক বিএনপি নেতা। পরে তাঁকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আদালত সূত্র জানায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানি আগামী বছরের ২ জানুয়ারি ধার্য রয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, চিন্ময়ের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ সুপ্রিম কোর্টের ওকালতনামা দিয়ে চিন্ময়ের জামিন শুনানি ধার্য দিনের আগে এগিয়ে আনার দ্বিতীয় দফার আবেদন করেন আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। আদালত তাঁকে শুনানি করার অনুমতি দিয়ে চট্টগ্রাম বারের কোনো আইনজীবী যুক্ত আছেন কি না জানতে চান, তখন রবীন্দ্র ঘোষ জানান সুমিত আচার্য নামের একজন আইনজীবী রয়েছেন। কিন্তু তখন সেই আইনজীবী হাজির না থাকায় আদালত শুনানি মুলতবি করে বেলা আড়াইটার দিকে আবার সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু তখনো সেই আইনজীবীকে হাজির করা যায়নি। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আইনজীবী সুমিত আচার্য হাজির হন। আদালতকে বলেন, তিনি মামলা লড়তে পারবেন না।
সরকারি কৌঁসুলি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বারের কোনো আইনজীবীর ওকালতনামা না থাকায় আদালত আবেদনটি নথিভুক্ত করে আগামী ধার্য দিনের জন্য রাখেন।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলাকে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হলেও সরাসরি মুভ (লড়তে) পারেন না। লোকাল বারের আইনজীবী যদি ওনাকে এনগেজড (যুক্ত) করেন সে ক্ষেত্রে অ্যাসিস্ট (সাহায্য) করতে পারেন। এটা চট্টগ্রাম বারের না শুধু, সারা দেশের নিয়ম। উনি এটা ফলো না করে মামলা মুভ করতে এসেছেন।’
কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় চিন্ময়ের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ আজ আদালতে হাজির হন। ১৫ জনের পুলিশের একটি দল তাঁকে নিরাপত্তা দেয়। আজ দুপুরে রবীন্দ্র ঘোষকে হাত ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি অঞ্চল) মাহফুজুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, নিরাপত্তার কোনো শঙ্কা নেই। যেহেতু জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ঢাকা থেকে এসেছে, সে জন্য উনাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।
জামিন আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের সভাপতি রবীন্দ্র ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে মুভ করেছিলাম। এটা যদি রিজেক্ট হয় হাইকোর্টে যাব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে ফিজিক্যালি নয়, মানসিক হেনস্তা করা হয়েছে।’
রবীন্দ্র ঘোষের বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রবীন্দ্র ঘোষকে কোনো ধরনের শারীরিক হেনস্তা করা হয়নি। এখন তিনি মানসিক হেনস্তার কথা বলেন। আমরা যখন আদালতে মুভ করি, দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে কথাবার্তা বলার সময় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়ে থাকে। এটাকে যদি মানসিক চাপ বলে থাকেন, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। কারণ, এটা দেশের প্রত্যেক কোর্টে হয়ে থাকে।’
চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর হওয়াকে ঘিরে ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আইনজীবী সাইফুলকে কোপান ওম দাশ, চন্দন ও রনব; আর তাঁকে পেটাতে থাকেন অন্যরা। সেখানে আরও ২৫ থেকে ৩০ জন ছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগই পরিচ্ছন্নতাকর্মী।