আদালতের আদেশ অমান্য করে বালু তোলায় সেই সেলিম খানের মেয়ের জরিমানা
আদালতের আদেশ অমান্য করে চাঁদপুরের মেঘনা নদী থেকে বালু তোলায় মেসার্স নিপা এন্টারপ্রাইজকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ সোমবার বিকেলে এই অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। রাতে জরিমানার তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান।
মেসার্স নিপা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সেলিনা বেগম চাঁদপুরের ‘বালুখেকো’ চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত সেলিম খানের মেয়ে।
জেলা প্রশাসক বলেন, সেলিম খানের মেয়ে সেলিনা বেগমের মেসার্স নিপা এন্টারপ্রাইজের লোকজন চাঁদপুর সদর উপজেলার চরজগন্নাথপুর, লগীমারা ও থাকচর লগীমারা মৌজায় বালু তুলছিলেন। এ সময় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. হেদায়েত উল্লাহর নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বালু তোলার সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে আটক করে ১০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে নগদ ১১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ও ১টি স্পিডবোট জব্দ করা হয়। পরে জব্দকৃত এবং জরিমানার অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয়।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এ অভিযানের সময় সেলিম খান বা তাঁর মেয়ে সেলিনা বেগমকে পাওয়া যায়নি। তাঁদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এর আগে চাঁদপুর সদর উপজেলার তিনটি মৌজায় অবস্থিত মেঘনা নদী থেকে সেলিনা বেগমকে বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন, গতকাল রোববার (২ জুন) তা স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের তথ্যানুসারে, চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম খানের মেয়ে সেলিনা বেগম। চাঁদপুর সদর উপজেলার চরজগন্নাথপুর, লগীমারা ও থাকচর লগীমারা—এই তিন মৌজায় হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের মাধ্যমে বালুমহাল হিসেবে ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে চলতি বছর একটি রিট করেন সেলিনা বেগম।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৬ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। পরবর্তী সময়ে রিট আবেদনকারীর করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ এপ্রিল হাইকোর্ট নির্দেশসহ আদেশ দেন। আদেশে বালু উত্তোলনের জন্য হাইড্রোগ্রাফিক জরিপে উল্লেখিত এলাকাগুলো সেলিনা বেগমকে সাত দিনের মধ্যে বুঝিয়ে দিতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়। উল্লেখিত জায়গায় বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বিবাদীদের প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের এ আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে, যা রোববার চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান শুনানিতে ছিলেন।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাঁদপুর সদর উপজেলার তিনটি মৌজায় অবস্থিত মেঘনা নদী থেকে চিহ্নিত জায়গা বালু উত্তোলনের জন্য সেলিনা বেগমকে বুঝিয়ে দিতে এবং সেখান থেকে বালু উত্তোলনে তাঁকে বাধা না দিতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে সোমবার শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন চেম্বার আদালত। ফলে সেলিনা বেগম তিন মৌজা থেকে বালু তুলতে পারবেন না।’