বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না, চালু হবে ‘না ভোট’: তোফায়েল আহমেদ
একক প্রার্থী থাকলেও ভবিষ্যতে বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ। এ ক্ষেত্রে ‘না ভোট’ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন প্রার্থী থাকলেও নির্বাচন করে বিজয়ী হতে হবে। কারণ, অন্য কোনো প্রার্থী না থাকলে এ ক্ষেত্রে ‘না ভোট’ই একজন প্রার্থীর ভূমিকায় থাকবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে (বার্ড) একটি সেমিনারে এসব কথা বলেন তোফায়েল আহমেদ। ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠার শক্তিশালী ও গতিশীলকরণ: সংস্কারভাবনা ২০২৪ বিষয়ক সেমিনার’ নামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বার্ড।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশকে সমৃদ্ধ করছে। কিন্তু তাঁরাই ভোট দিতে পারেন না। এ জন্য প্রবাসীদের কীভাবে ভোটের আওতায় আনা যায়, এ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, ভোট গ্রহণে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, সাংবাদিকসহ অনেকে ভোট দিতে পারেন না। তাঁদেরও কীভাবে ভোটের আওতায় আনা যায়, তা নিয়ে কাজ করছি আমরা।’
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা সামনে পোস্টাল ভোটকে কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছি। যাঁরা পোস্টাল ভোট দেবেন, তাঁরা আগেই আবেদন করবেন। অনলাইনের পাশাপাশি উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকেও পোস্টাল ভোটের আবেদনের ব্যবস্থা থাকবে। বাংলাদেশে আইনগতভাবে পোস্টাল ভোট চালু আছে, কিন্তু কার্যকারিতা নেই। আমরা এই ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না রাখার বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তোফায়েল আহমদ। তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে। আমরা এই বিষয়টি নিয়েও কাজ করছি।’
ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে একজন নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা মানেই তিনি ভোটার। তবে কেউ মারা গেলে তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। এ জন্য এনআইডিতে কোনো ত্রুটি থাকলে সেটাকে সংশোধন করার সুযোগ দেওয়া হবে।
বার্ডের মহাপরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারের আলোচক ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মাসুদা কামাল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য মাসুদা খাতুন শেফালী। এ সময় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছামছুল আলম, বার্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সাবেক জনপ্রতিনিধি, উন্নয়নকর্মী, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।
সেমিনারে বার্ডের কর্মকর্তাদের মধ্যে যাঁরা বিগত সময়ে নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা দায়িত্ব পালনে তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এ সময় বিগত নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের ভূমিকার পাশাপাশি প্রার্থী, রাজনৈতিক দলের প্রভাব ও হুমকির বিষয়টি উঠে আসে। নির্বাচনব্যবস্থায় সংশোধন এনে ভোটাধিকার প্রয়োগের বয়স ২৫ থেকে ৬৫ পর্যন্ত রাখার কথা বলেন। আর প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩০ বছর করার প্রস্তাব করেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মাসুদা কামাল তাঁর বক্তব্যে অন্যান্য সংস্কার কমিশনের মতো রাজনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘দেশ চালান রাজনীতিবিদেরা। তাঁদের মধ্যেও সংস্কার দরকার। এ জন্য রাজনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানাচ্ছি।‘