হত্যার পর স্যুটকেসে কীভাবে লাশ ভরেন, আদালতে জবানবন্দিতে জানালেন রোজিনা
ফরিদপুরের বাসস্ট্যান্ডে স্যুটকেস থেকে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেপ্তার রোজিনা আক্তার ওরফে কাজল (৩২)। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ফরিদপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাসিম মাহমুদের আদালতে এই হত্যা মামলার একমাত্র আসামি হিসেবে তিনি ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি দেন। এ সময় এ মামলার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন মাহিন্দ্রাচালক মো. জানু ব্যাপারী (৪৮) ও রিকশাচালক মো. তাবেল ব্যাপারী (২৫)।
এ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজন বিশ্বাস বলেন, জবানবন্দি শেষে বিকেল ৫টার দিকে আদালতের নির্দেশে রোজিনাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি দুই সাক্ষীর জবানবন্দি শেষে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
গত শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফরিদপুর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গোল্ডেন লাইন বাস কাউন্টারের সামনে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির পাশে ছাই রঙের লাগেজ (স্যুটকেস) তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিষয়টি এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তাঁরা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ স্যুটকেসের তালা ভেঙে মাথা, হাত ও পা গোটানো অবস্থায় একটি লাশ উদ্ধার করে। পরে জানা যায়, লাশটি মিলন প্রামাণিকের (৩৯)। তিনি পাবনা সদরের নতুন গোহাইবাড়ি মহল্লার কাশের প্রামাণিকের ছেলে। তিনি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট এলাকায় ইটভাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুজন বিশ্বাস জানান, আদালতে রোজিনা মিলন প্রামাণিকের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, ধার দেওয়া টাকা ফেরত না দেওয়া, তাঁকে গালাগালি করা—এসব ক্ষোভে মিলনকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন বলে জানান। পাশাপাশি তিনি লাশটি কীভাবে গুম করার চেষ্টা করেন, তার বর্ণনা দেন।
এর আগে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ রোজিনাকে আদালতে সোপর্দ করে। রোজিনা জবানবন্দি না দিলে তাঁকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রস্তুতি নিয়েছিল পুলিশ।
পুলিশ জানায়, নিহত মিলন বিবাহিত এবং তাঁর একটি মেয়ে আছে। গোয়ালন্দে থাকা অবস্থায় দৌলতদিয়া যৌনপল্লির নিবাসী রোজিনার সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। বিভিন্ন সময়ে রোজিনা তাঁকে তিন থেকে চার লাখ টাকা ধার দেন। দীর্ঘদিন ধরে এ টাকা পরিশোধ না করায় তাঁর সঙ্গে রোজিনার সম্পর্কের অবনতি হয়। গত শুক্রবার রাতে মিলন রোজিনার ঘরে যান। তিনি রোজিনাকে পাঁচ হাজার টাকা ফেরত দেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে রাত দুইটার দিকে রোজিনা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন মিলনকে। পরে মিলনের মরদেহ একটি লাগেজে (সুটকেস) ভরেন। পরে একটি রিকশায় গোয়ালন্দ মাহিন্দ্রাস্ট্যান্ডে এসে একটি মাহিন্দ্রা ভাড়া করে ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ডে যান।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে পুলিশ কীভাবে অভিযান চালিয়ে রোজিনাকে গ্রেপ্তার করে, তা আজ মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম সংবাদ সম্মেলন করে তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে আটক করা হয় মাহিন্দ্রাচালক জানু ব্যাপারী ও রিকশাচালক তাবেল ব্যাপারীকে।