চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে ২০০০ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে অবসরে যান মো. সিদ্দিকুর রহমান। চাকরি থেকে অবসরে গেলেও কাজ থেকে অবসর নেননি তিনি। ৮২ বছর বয়সেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি।
গরিব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ দেওয়ার পাশাপাশি বাড়িতে নিয়ে বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান করেন সিদ্দিকুর রহমান। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আলোচনা সভা-সেমিনারে অন্যতম প্রধান আলোচক হিসেবে তথ্যনির্ভর বক্তব্য দেন তিনি। শ্রোতারাও মন্ত্রমুগ্ধের মতো তা শোনেন। শিক্ষা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক ভূমিকা রাখায় ২০২১ সালে প্রথম আলো বন্ধুসভা তাঁকে সম্মাননা দেয়।
সিদ্দিকুর রহমান জানান, ৫৭ বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা শহরের বাসিন্দা হলেও তাঁর জন্ম এবং স্নাতক পর্যন্ত পড়াশোনা পাবনা জেলায়। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে জন্ম তাঁর। নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ঈশ্বরদীর চন্দ্র প্রভা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে স্নাতক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসেবে স্নাতকোত্তর পাস করেন। এরপর ১৯৬৬ সালে চুয়াডাঙ্গা কলেজে (বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ) প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। একই সময়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ এই কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দান করেছিলেন। দেশ স্বাধীনের আগেই বাংলা ও ইংরেজিতে বিষয়ভিত্তিক বই লিখে মো. সিদ্দিকুর রহমান সাড়া ফেলে দেন।
চুয়াডাঙ্গা কলেজে ১৭ বছর চাকরির পর ১৯৮৩ সালে মাগুরার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে ১৯৮৫ সালে দর্শনা সরকারি কলেজ এবং দর্শনা থেকে ১৯৯০ সালে ঝিনাইদহ কেসি কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯১ সালে উপাধ্যক্ষ হিসেবে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে আবারও যোগ দেন। ১৯৯৮ সালে অধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি নিয়ে দর্শনা সরকারি কলেজে যোগ দেন। কয়েক মাসের মাথায় একই পদে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে আসেন। ২০০০ সালে চাকরি থেকে অবসরে যান।
চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন হিসেবে যোগ দেন। একই পদে ১৮ বছর দায়িত্বে ছিলেন। এ ছাড়া ২০০৭ সাল থেকে সুশাসনের জন্য নাগরিক, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির প্রথম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন মো. সিদ্দিকুর রহমান। চুয়াডাঙ্গা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
গতকাল বুধবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা শহরের কলেজপাড়ার বাসায় বসে কথা হয় কৃতী এই মানুষটির সঙ্গে। ব্যক্তিজীবনে এই শিক্ষাবিদের দুই ছেলে। বড় ছেলে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মামুনুর রহমান ও ছোট ছেলে শামীম উর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের তেল ও গ্যাস কোম্পানি শেভরনে ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মালিক ছিলেন মো. সিদ্দিকুর রহমানের ছাত্র। নুরুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু শিক্ষক হিসেবে তাঁর যথেষ্ট সুনাম আছে। সামাজিক আন্দোলনেও তিনি ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছেন। বেশ কিছু সামাজিক ও নাগরিক সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।’
মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমার কোনো অতৃপ্তি নেই। আমি মানুষের যত ভালোবাসা পেয়েছি, সেটিই অনেক বেশি পাওনা। আমার ছাত্রদের অনেকেই দেশে-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরিতে আছেন, কেউ কেউ অবসরেও চলে গেছেন। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত যেন মানবসেবায় এভাবে কাজ করে যেতে পারি।’