কিশোরগঞ্জের প্রবাসীর লাশ ভুলে যশোরে দাফন
কফিনের গায়ে ভুল ঠিকানা লেখা থাকার কারণে এক সৌদিপ্রবাসীর লাশ তাঁর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার জগদলে দাফন না হয়ে আরেক প্রবাসীর গ্রামের বাড়ি যশোরের শার্শা উপজেলার বাগুড়ী গ্রামে দাফন হয়েছে। ওই দুই প্রবাসীই সম্প্রতি সৌদি আরবে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তাঁরা সৌদি আরবের মক্কায় একই পেশায় ছিলেন, কাজও করতেন পাশাপাশি এলাকায়। পরে দুই পরিবারের সদস্যরা লাশ অদলবদলের বিষয়টি নিশ্চিত হলে কিশোরগঞ্জের প্রবাসীর লাশ যশোরের কবরস্থান থেকে প্রশাসনের উপস্থিতিতে তোলা হয়। লাশটি তাঁর নিজ গ্রামে এনে পুনরায় আজ শুক্রবার দাফন করা হয়েছে।
ওই দুই প্রবাসীর একজন মোজাম্মেল হক (৪৫)। তিনি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার জগদল গ্রামের মো. তৈয়েব আলীর ছেলে। প্রয়াত অপর প্রবাসীর নাম রুবেল হোসেন (২২)। তিনি যশোরে শার্শা উপজেলার বাগুড়ী গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে।
দুই পরিবার সূত্রে জানা যায়, মোজাম্মেল হোসেন সৌদি আরবের মক্কার কাছে রোড ক্লিনারের কাজ করতেন। রুবেল হোসেন পাশাপাশি এলাকায় ক্লিনার হিসেবে কাজ করতেন। ১৭ জুলাই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মোজাম্মেল। রুবেল মারা যান ৩ জুলাই। তাঁদের দুজনের লাশই সৌদি আরবে হিমঘরে রাখা হয়।
বৃহস্পতিবার মোজাম্মেলের লাশ বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। সে জন্য স্বজনেরা ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু লাশ না আসায় তাঁরা সৌদি আরবে যোগাযোগ করলে মোজাম্মেলের সহকর্মীরা জানান, সৌদির হিমঘর থেকে লাশ অদলবদল হয়ে গেছে। অন্য একজনের কফিনে বুধবার বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় মোজাম্মেলের পরিবারের লোকজন একটু হয়রানির শিকার হলেও লাশটি শেষ পর্যন্ত বুঝে পায়। এটা কোনো অপরাধমূলক ঘটনা না। শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের কারণে এমনটি হয়েছে।
মোজাম্মেলের স্বজনেরা খোঁজখবর করে জানতে পারেন, মোজাম্মেলের লাশ যাঁর কফিনে পাঠানো হয়েছে, তাঁর নাম রুবেল হোসেন। সৌদি কর্তৃপক্ষ ভুল করে তাঁর স্থলে মোজাম্মেলের লাশ দেশে পাঠিয়েছে। আর মোজাম্মেলের কফিনে রাখা হয়েছে রুবেলের লাশ, যা এখনো সৌদির হিমঘরে রয়েছে।
রুবেলের স্বজনেরা গত বুধবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রুবেলের মনে করে মোজাম্মেলের লাশটি গ্রহণ করেন। ওই দিন বিকেলে লাশটি রুবেলের বাড়িতে পৌঁছানোর পর কফিন খুলে স্বজনেরা লাশটি রুবেলের নয় বলে মনে করলেও স্থানীয় মুরব্বিরা ধারণা করেন, দেরিতে পৌঁছায় কোনো কারণে হয়তো লাশটির বিকৃতি হয়েছে। এ জন্য হয়তো চেনা যাচ্ছে না। তাঁরা লাশটি দ্রুত দাফন করতে বলেন। পরে রাতেই জানাজা শেষে স্থানীয় যশোরে শার্শা উপজেলার বাগুড়ী গ্রামের সরকারি কবরস্থানে রুবেলের মনে করে মোজাম্মেলের লাশ দাফন করা হয়।
এরপর মোজাম্মেলের স্বজনেরা রুবেলের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা বৃহস্পতিবার যশোরের শার্শায় রুবেলের বাড়ির ঠিকানায় যান এবং সব প্রমাণ উপস্থাপন করেন। পরে রুবেলের পরিবারও সৌদি আরবে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, তাঁরা রুবেল মনে করে যে লাশটি দাফন করেছেন, সেটি আসলে রুবেলের না। রুবেলের লাশ এখনো সৌদি আরবের হিমঘরে রয়েছে। পরে মোজাম্মেলের স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যশোরের স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে সরকারি কবরস্থান থেকে মোজাম্মেলের লাশটি উত্তোলন করা হয়। সেখান থেকে হোসেনপুরের জগদল এলাকায় নিজ বাড়িতে আজ ফের দাফন করা হয় মোজাম্মেলের লাশ।
মোজাম্মেলের স্বজন শামীম সরকার বলেন, নিহত মোজাম্মেল তাঁর ফুফা। সৌদি আরবের হিমঘরে কফিনের গায়ে দুজনের নাম-ঠিকানা ভুল হওয়ায় মূলত লাশের এ অদলবদল হওয়ার ঘটনা ঘটে। মোজাম্মেলের কফিনে ঠিকানা ছিল রুবেলের, সে জন্য রুবেলের স্বজনেরা এ লাশ নিয়ে যান এবং দাফন করে ফেলেন। পরে তাঁর ফুফার লাশ না পৌঁছায় তাঁরা সৌদি আরবে যোগাযোগ করেন। সৌদি কর্তৃপক্ষ মোজাম্মেলের ঠিকানা লেখা কফিনে রাখা লাশের ছবি পাঠালে তাঁরা নিশ্চিত হন যে এ লাশ মোজাম্মেলের না। মূলত রুবেলের লাশটি এখনো বাংলাদেশে আসেনি। সেটি আগামীকাল শনিবার আসার কথা। সৌদিতে থাকা মোজাম্মেল ও রুবেলের সহকর্মীরাও নিশ্চিত হন, যে কফিনের গায়ে ভুল ঠিকানার কারণে দুজনের লাশ অদলবদল হয়ে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সৌদি থেকে পাঠানো কফিন বাক্সের ওপর মোজাম্মেলের বদলে রুবেলের মা-বাবার নাম ও পূর্ণ ঠিকানা লেখা ছিল। ফলে বিমানবন্দর থেকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা লাশের কফিন বাক্স তাঁদের কাছে হস্তান্তর করার সময় কেউ আর লাশের বক্সটি খুলে দেখেননি। এ ঘটনায় মোজাম্মেলের পরিবারের লোকজন একটু হয়রানির শিকার হলেও লাশটি শেষ পর্যন্ত বুঝে পায়। এটা কোনো অপরাধমূলক ঘটনা না। শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের কারণে এমনটি হয়েছে।