কোটা বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে ঘণ্টাব্যাপী ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে আটকা পড়ে অসংখ্য যানবাহন। দুর্ভোগে পড়েন হাজারো যাত্রী।
বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে সেখানে বিক্ষোভ করেন। এ সময় এক ঘণ্টার বেশি সময় তাঁরা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সমাবেশের পর শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান।
সমাবেশে বক্তব্য দেন শিক্ষার্থী সুজয় শুভ, সিবাত আহমেদ, ভূমিকা সরকার, আনিকা সরকার, মৃত্যুঞ্জয় রায় প্রমুখ। শিক্ষার্থীরা বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না। তাঁরা আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী কোটা বাদে সব বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন। ৫৬ শতাংশ কোটা কোনো দেশের স্বাভাবিক অবস্থা হতে পারে না। মেধাবীরা পরিশ্রম করে চাকরি পাবেন, কোটায় নয়। কোটা প্রথা কখনোই জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে না। এটা দেশের মেধাবীদের সঙ্গে একধরনের উপহাস করা হচ্ছে।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ভূমিকা সরকার বলেন, ‘আমরা এখানে মূলত কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে এসেছি। আমি একজন নারী, আমি চাই যে নারী কোটা না থাকুক। নারী কোটার মাধ্যমে নারীদের সমাজে আরও বেশি হেয় করা হয়। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় কোটা ব্যবস্থাগুলোর বাতিল দাবি জানাচ্ছি।’
মহাসড়ক অবরোধ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। আটকা পড়া একটি বাসের যাত্রী মোতালেব হাওলাদার বলেন, ‘পটুয়াখালী থেকে চিকিৎসা নিতে বরিশাল যাচ্ছিলাম। সড়ক অবরোধ করায় গরমের মধ্যে এক ঘণ্টা আটকে আছি। খুব কষ্ট হচ্ছে।’
বরিশাল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। পরে দুপুরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, গত বুধবার সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওই সব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো। এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বুধবার এ রায় দেন।