ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু
দখলে হারিয়ে যাচ্ছে খাল
হরিণাকুণ্ডুর শাখারিদহ বাজারের খাল দখল করে শতাধিক দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। পাউবো এসব স্থাপনা উচ্ছেদে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শাখারিদহ বাজারের খালের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পাউবোর পক্ষ থেকে বারবার নোটিশ দেওয়ার পরও দখলদারেরা তাঁদের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছেন না। পাউবো উদ্যোগ নিলেও রাজনৈতিক কারণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে পারছে না। এতে খালটি সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। আর খালটি সরু হয়ে যাওয়ায় বাজারের পানিনিষ্কাশন এবং ওই এলাকায় কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে খালটি দ্রুত দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ-হরিণাকুণ্ডু সড়কের পাশে উপজেলার শাখারিদহ এলাকায় শত বছরের একটি বাজার আছে। এই বাজারের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের আধা কিলোমিটার এলাকায় শতাধিক দখলদার দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। দখলদারদের সরে যাওয়ার জন্য প্রতিবছর পাউবোর পক্ষ থেকে নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই নোটিশের তোয়াক্কা না করেই খালের জায়গা দখল করে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। মাঝেমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের ওই এলাকায় দেখা গেলেও উচ্ছেদ অভিযানের কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। এভাবে ২৫ বছরে দখল হতে হতে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে খালটি। একসময় খালের প্রস্থ ৫০ ফুট ছিল। কিন্তু দুই পাড় থেকে দখল অব্যাহত থাকায় খালের প্রস্থ কোথাও ১০ ফুট আবার কোথাও ১৫ ফুট আছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ দুই মাস আগে দখলদারদের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলার নোটিশ ও উচ্ছেদ অভিযানের জন্য ঠিকাদার নির্বাচন করেও অভিযান চালানো হয়নি। এ ঘটনায় দখলদারদের মধ্যে উৎসাহ বাড়বে বলে মনে করেন এলাকাবাসী। তাঁরা এলাকার কৃষিকাজ সচল রাখতে এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে খালটি দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, উচ্ছেদের চিঠি দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা আর দখলদারদের মধ্যে অদৃশ্য সমঝোতা হয়। এই কারণে চিঠি দিলেও উচ্ছেদ হয় না। ইতিমধ্যে খালের প্রায় ৬০ শতাংশ জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পাউবোর ঝিনাইদহ কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুনীল কুমার ভদ্র প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা উচ্ছেদ অভিযানের জন্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন। ঠিকাদারও নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তাঁরা উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারছেন না। অবশ্য খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালের পাড় দখল করে যাঁরা দোকানঘর নির্মাণ করেছেন, তাঁরা স্থানীয় ব্যবসায়ী। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের তেমন বড় কোনো নেতা নেই।
শাখারিদহ বাজার কমিটির সভাপতি খায়রুল ইসলাম বলেন, বাজারে ছোট–বড় ২৬৫টি দোকান আছে। সেখানে সরকারিভাবে দোতলা চাঁদনী মার্কেটের নির্মাণকাজ চলছে। এ ছাড়া বাজারের সঙ্গে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে।
এলাকাবাসী বলছেন, বাজারের মাঝ বরাবর গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের একটি খাল বয়ে গেছে। খালের দক্ষিণে বাজারটির অবস্থান থাকলেও রাস্তার কারণে বাজারটি উত্তরে সরে এসেছে। পরে একশ্রেণির দখলদার খালের পাড় দখল করে দোকান নির্মাণ শুরু করেন। এভাবে দখল হতে হতে বাজারটি উত্তর দিকে সরে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজারের একাধিক ব্যক্তি আলোকে বলেন, খালের দুই পাড় দখল করে একের পর এক ভবন নির্মাণ করায় বাজারের সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে। বাজারের জমি ফেলে রেখে খালের দখল করা জমিতে বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে। এখন মূল জমিতে ব্যবসায়ীরা ফিরতে পারছেন না। উল্টো খালের জায়গা দখল করায় ঝিনাইদহ-হরিণাকুণ্ডু সড়কটি সংকুচিত হয়ে গেছে।
লিটন মিয়া নামের এক দখলদার প্রথম আলোকে বলেন, সবাই দখল করেই ব্যবসা করছেন। অন্যরা উঠে গেলে তিনিও যাবেন। নোটিশের বিষয়ে বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই নোটিশ আসে। তাদের (পাউবো) সঙ্গে কথা বলে সব ঠিক করতে হয়। এভাবে বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে।’
ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, অন্যরা দখল করেছেন দেখে তিনিও একটি ছোট দোকান করেছেন। উচ্ছেদ করলে চলে যাবেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমঝোতা করেই আমাদের চলতে হয়।’
শাখারিদহ বাজার কমিটির সভাপতি খায়রুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মাঝেমধ্যে ব্যবসায়ীরা নোটিশ পান। কয়েক দিন এ নিয়ে বাজার গরম থাকে। কিছুদিন পর আবার সব ঠিক হয়ে যায়। তিনি বলেন, খালের জায়গা দখলমুক্ত করতে কখনো কোনো কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে আলাপ করেনি।
ওই খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য পাউবোর নিয়োগ করা ঠিকাদার মতিয়ার রহমান জানান, তিনি শৈলকুপা ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ৬২৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কার্যাদেশ পেয়েছেন। এই কাজের জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে শৈলকুপা উপজেলার কয়েকটি স্থানের প্রায় ১৫০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন। হরিণাকুণ্ডুর শাখারিদহ বাজারে উচ্ছেদ করার প্রস্তুতিকালে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়েছে। উচ্ছেদ কাজ শেষ না হলে তিনি বিল পাবেন না, তাই উচ্ছেদ বন্ধ থাকায় তিনিও বিপাকে পড়েছেন।