বাড়ির পাশে সবজির বাগান, বাড়তি আয় 

মিনতির বাড়িতে আকাশি নারী দলের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় একটি সবজির বীজ ব্যাংক। সেখানে রয়েছে ৩২ রকমের শাকসবজির বীজ। 

নিজ বাড়ির পাশে সবজিখেতে কাজ করছেন অনিতা মুরমু। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বাইপুরে সম্প্রতিছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের বাইপুর সাঁওতাল গ্রামের ১২ নারী বাড়ির পাশের পতিত জমিতে সবজি চাষ করছেন। পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে তাঁরা এসব সবজি বিক্রি করে বাড়তি আয়ও করছেন।

 কৃষি বিভাগের ‘পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান’ প্রকল্পের সহায়তা নিয়ে নিজেদের পরিশ্রমে এ সাফল্য পেয়েছে সাঁওতাল নারীরা। ‘আকাশি নারী দল’ নামের একটি সংগঠন করে তাঁরা এ কাজ করছেন। 

সম্প্রতি বাইপুর সাঁওতাল গ্রামে গিয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে নারী দলের নেত্রী অনিতা মুরমু আসেন। তিনি নিয়ে যান দলের আরেক সদস্য মিনতি কিসকুর পুষ্টি নিরাপত্তার ছোট বাগানে। বাড়ির পাশের এক শতক জমিতে সেই বাগান। স্বামীকে নিয়ে শাকসবজির বেড তৈরিতে ব্যস্ত দেখা যায় মিনতি কিসকুকে। বেড তৈরির পর সেখানে ছিটালেন লালশাকের বীজ। অন্যান্য বেডে দেখা যায় পালংশাক, মুলা, টমেটো, কাঁচা মরিচ। মাচায় দেখা যায় শিম ও লাউ।

মিনতি কিসকু বলেন, ‘বাড়ির পাঞ্জরের জাগাটা জঙ্গল হয়্যা পড়্যাই থাকত। ট্রেলিং লিয়া এখুন হামরা সিখানে বিষ (কীটনাশক) ছাড়া হরেক রকম শাকসবজি উবজাই। নিজে খাই, পাড়াপড়শিকে খিলাই। তিন মাস থাকি বাজারের সবজি খাইনি। মাঝেমধ্যে কিছু কিছু বেচি। টাকা হয়। তখুন আনন্দ পাই।’

মিনতির বাড়িতে আকাশি নারী দলের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় একটি সবজির বীজ ব্যাংক। তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঝকঝকে তকতকে বাড়ির আলপনা আঁকা মাটির দেয়ালে ঝুলছে সারি সারি প্লাস্টিকের বোতল। এগুলোতে রয়েছে ৩২ রকমের শাকসবজির বীজ। নাম রাখা হয়েছে বীজ ব্যাংক। এ বীজ ব্যাংক থেকে বীজ নিয়ে সংগঠনের বাইরের নারীরাও লাউ, শিম, কুমড়ার গাছ লাগান।

আকাশি নারী দলের সভানেত্রী অনিতা মুরমুর প্রায় দেড় শতকের সবজিখেতে গিয়ে দেখা যায়, নানা রকমের সবজির গাছ সেখানে। এর মধ্যে রয়েছে বাঁধাকপি, ফুলকপি, মুলা, পালংশাক, লালশাক, বরবটি, ঝিঙে, টমেটো, কাঁচা মরিচ, ধনিয়া। উচ্চমাধ্যমিক পাস করা অনিতা মুরমু বলেন, উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে যাওয়ার আগে তাঁরা কোনো দিন কোনো সরকারি অফিসে যাননি। তাই মনে ভয় ছিল। কিন্তু অফিসে গিয়ে সব ভয় দূর হয়ে গেছে। তাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়ে আলাদা আলাদা জমি (বেড) তৈরি করে চাষ করতে শিখেছেন। কৃষি অফিস তাঁদের জৈব সার ও ১৭ ধরনের বীজ দিয়েছে। পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধ করার জন্য শিখিয়েছে নিমপাতা ও ছাই ব্যবহার করা। তাই তাঁরা কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ছাড়াই সবজি উৎপাদন করে পরিবারের চাহিদা মেটাচ্ছেন, প্রতিবেশীদের দিতে পারছেন। প্রয়োজনে বিক্রিও করতে পারছেন। তাঁদের দেখে গ্রামের অন্য নারীরাও আগ্রহী হচ্ছেন।

অনিতা মুরমু আরও বলেন, ‘আকাশি নারী দল’ সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা নারীরা ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করে স্যানিটারি ল্যাট্রিন তৈরির জন্য আটটি পরিবার রিংস্ল্যাব পেয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, পর্যায়ক্রমে গ্রামের সবাইকে এ সুবিধা দেওয়া হবে। এ ছাড়া গ্রামের কয়েকজন নারী মাতৃত্বকালীন ভাতা, সরকারি সহায়তার চাল, ওএমএস ও টিসিবির পণ্য কেনার সুবিধা পেয়েছে। তাঁরা নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হয়েছেন। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালেহ আকরাম বলেন, কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ‘পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান’ তৈরিতে শতভাগ সাফল্য দেখিয়েছেন বাইপুর গ্রামের সাঁওতাল নারীরা। তাঁদের এ সাফল্য অন্যদের জন্য অনুকরণীয়।