যাত্রীসংকটে বন্ধ লঞ্চ চলাচল

গতকাল মঙ্গলবার থেকে এই নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে নিম্ন আয়ের যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন।

যাত্রী-সংকটের কারণে ঢাকা-বরগুনা নদীপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার বিকেলে বরগুনার ফুলঝুড়ি লঞ্চঘাটে তোলা
ছবি: মোহাম্মদ রফিক

পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রীসংকটের প্রভাব পড়তে শুরু করে বরগুনা–ঢাকা নৌপথের লঞ্চগুলোতে। যাত্রীসংকটের কারণে লাগাতার লোকসান হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার থেকে ঢাকা-বরগুনা নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন লঞ্চমালিকেরা। এতে পণ্য পরিবহনে যেমন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, তেমনি নিম্ন আয়ের মানুষও কম ভাড়ায় নৌপথে আরামদায়ক ভ্রমণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।

লঞ্চমালিকেরা বলছেন, সেতু চালুর আগে একেকটি লঞ্চে বরগুনা নদীবন্দর ঘাট থেকেই প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ যাত্রী হতো। সেখানে সেতু চালুর পর ১০০ যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকা-বরগুনা নদীপথে ছয়টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করছিল। এর মধ্যে কয়েক মাস আগে যাত্রী কম হওয়ায় দুটি লঞ্চ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর যাত্রীসংকট ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এম কে শিপিং লাইনস কোম্পানির চারটি লঞ্চ বন্ধ করে দেন।

লঞ্চের যাত্রীরা বলছেন, লঞ্চের যাত্রা আরামদায়ক। আবার সময়ও বেশি লাগে। নিরাপদ যাতায়াতের জন্য মানুষ এখনো লঞ্চে যাতায়াত করেন। কিন্তু বরগুনা লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। আগে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে কম খরচে তাঁকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হতো। এখন তাঁদের তিন–চার গুণ বেশি টাকা খরচ করে বাসে করে ঢাকা যেতে হচ্ছে।

গত সোমবার বিকেল চারটায় বরগুনা নদীবন্দর থেকে এমভি রাজহংস-৮ নামের একটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। লঞ্চটিতে ৮০ থেকে ৯০ জন যাত্রী ছিলেন। লঞ্চটিতে কাকচিড়া ও ফুলঝুড়ি ঘাট থেকে ৫০ জনের মতো যাত্রী ওঠেন। স্বাভাবিক সময় এই দুই ঘাট থেকে ২০০ থেকে ২৫০ জন যাত্রী উঠতেন।

বরগুনা ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি জহিরুল হক বলেন, প্রাচীন এই নৌপথ বন্ধ হয়ে গেলে বরগুনার ব্যবসা-বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়বে। পণ্য পরিবহনের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়বেন। ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এতে প্রভাব পড়বে বাজারে। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ক্রেতারাও ক্ষতির মুখে পড়বেন। 

এম কে শিপিং লাইনস কোম্পানির মালিক মাসুম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আপাতত ঢাকা–বরগুনা রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছি। প্রতিটি ট্রিপে আমাদের দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লোকসান হয়। এ ছাড়া জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের লোকসান হচ্ছে।’

এ বিষয়ে বরগুনা নদীবন্দর কর্মকর্তা নিয়াজ মোহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের না জানিয়ে এম কে শিপিং লাইনস কোম্পানি লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছে। কী কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে, তা জানার জন্য লঞ্চমালিকের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করেছি, তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘লঞ্চ চলাচল বন্ধের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখব।’