‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু না হওয়ায় শহীদ পরিবারগুলো আহাজারি করছে’

শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে গতকাল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরাছবি: প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামিদের শিগগিরই গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আজ বৃহস্পিতবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এই মানববন্ধন হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রায় পাঁচ মাসেও গুলি করার নির্দেশদাতা পুলিশ কর্মকর্তা, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে আবু সাঈদসহ হাজারো ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছেন। ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিশেষ গুলি চালানো স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের বিদায়ের চার মাস হয়ে গেছে। কিন্তু যাঁরা শহীদ হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, তাঁদের খুনিদের বিচার শুরু হয়নি।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রহমত আলী। তিনি বলেন, যে পুলিশ সদস্যরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করেছেন, তাঁদের মাত্র দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ নির্দেশদাতা পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। বেশির ভাগ খুনি ধরাছোঁয়ার বাইরে।

রহমত আলী আরও বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু না হওয়ায় শহীদ পরিবারগুলো আহাজারি করছে। অথচ খুনিরা দেশে ও দেশের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসনকে এই ব্যর্থতার জবাব দিতে হবে।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান, সুমন সরকার, ফারুক আহমেদ, নয়ন মিয়া, আবদুর রাকিব, সাকিব ইসলাম প্রমুখ।

শামসুর রহমান বলেন, ‘আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত ছিল। কিন্তু তাদের এখনো গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা হয়নি। এখনো বিচার নিয়ে টালবাহানা চলছে। আমরা কোনো শুভংকরের ফাঁকি দেখতে চাই না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত ১৬ জুলাই গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ। তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হন অনেক মানুষ, এতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন।

এই ঘটনায় গত ১৮ আগস্ট পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, রংপুর রেঞ্জের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল বাতেন, রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামানসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী।

এই মামলায় পুলিশের বরখাস্ত হওয়া সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এ ছাড়া গত ১৮ নভেম্বর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যায় মামলায় তৎকালীন প্রক্টর ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তিনিও কারাগারে আছেন।