পঞ্চগড়ে সড়ক দুর্ঘটনা: গুরুতর আহত বাবা এখনো অচেতন, ছেলেকে দাফন

নিহত মনসুর আলীছবি: সংগৃহীত

অটোভ্যানচালক বাবা মজিবর রহমানের (৪৬) ভ্যানেই বাজারে যাচ্ছিলেন কলেজপড়ুয়া ছেলে মনসুর আলী (২১)। সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন যাত্রী। পথে একটি প্রাইভেট কারের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন তাঁরা। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের পাঠানো হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। পথে ছেলে মনসুর আলী মারা গেলে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয় তাঁর লাশ। আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় মনসুরের লাশ দাফন হলেও তা জানেন না হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অচেতন বাবা মজিবর রহমান।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের জগদল বাজারের পুরাতন বাঁশহাটি এলাকায় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হতাহত বাবা-ছেলের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

নিহত কলেজছাত্র মনসুর আলী পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের মধুপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি জগদল ডিগ্রি কলেজে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক মাস আগে মনসুর আলী বিয়ে করেছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

পরিবার ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মিজানুর রহমান মানিক প্রথম আলাকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে জগদল বাজারে বাবা মজিবর রহমানের ব্যাটারিচালিত অটোভ্যানে করে যাচ্ছিলেন ছেলে মনসুর আলী। এ সময় তাঁদের সঙ্গে আরও দুজন যাত্রী ছিলেন। অটোভ্যানটি জগদল বাজারের পুরাতন বাঁশহাটিতে পৌঁছালে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কে তেঁতুলিয়া থেকে পঞ্চগড়গামী একটি প্রাইভেট কার অটোভ্যানটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ভ্যানচালকসহ চারজনই সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ভ্যানচালক মজিবর রহমান ও তাঁর ছেলে মনসুর আলীর অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের  রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। পরে রাতে অচেতন অবস্থায় তাঁদের বাবা-ছেলে দুজনকেই রংপুরে নেওয়ার পথেই ছেলে মনসুর আলী মারা যান। পরে তাঁর লাশ বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয় আর মজিবর রহমান এখনো অচেতন অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

নিহত মনসুর আলীর চাচা মো. বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাত্র ১০ শতক ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই নেই মজিবরের। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন তিনি। তিন ছেলের মধ্যে মনসুর ছিলেন মেজ। অভাবের সংসারে বড় ছেলে আর আর ছোট ছেলেকে পড়াশোনা করাতে না পারলেও মনসুরকে ডিগ্রিতে পড়াচ্ছেন। গত জুন মাসের ৪ তারিখে মনসুর বিয়ে করেছেন। আজকে মনসুরের দাফন হলো অথচ তাঁর বাবা কিছুই জানেন না। তাঁর তো এখনো জ্ঞানই ফেরেনি। এর চেয়ে দুঃখের খবর আর কী আছে বলেন?’

তেঁতুলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, ঘটনার পর প্রাইভেট কারটি রেখে চালক পালিয়ে গেছেন। তবে অটোভ্যান ও প্রাইভেট কারটি জব্দ করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহত মনসুর আলীর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।