প্রধানমন্ত্রী চাইলেই চলে যাব, আপনারা আমাকে আরেকটু সহ্য করুন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
‘প্রধানমন্ত্রী যখন চাইবেন, আমি চলে যাব। এখন উনি চাইছেন না, আমি কী করব? তাই আমাকে থাকতেই হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যখন চাইছেন না, তখন আপনারা আমাকে আরেকটু সহ্য করুন।’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ছাত্র হল উদ্বোধনের সময় আজ শুক্রবার দুপুরে এ কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার।
উপাচার্যের দপ্তরের সম্মেলনকক্ষে হল দুটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত থেকে দুটি হলের উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। উপাচার্য শিরীণ আখতার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান হল নামের এ দুই হলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন চাইছেন না আমি চলে যাই, তখন আপনারা আমাকে একটু সহ্য করুন। উনি যখন বলবেন, তখন আমি সিট (পদ) ছেড়ে দিয়ে চলে যাব। আপনারা তত দিন পর্যন্ত আমাকে একটু ভালো রাখেন। আমার বিরুদ্ধে যা–ই বলবেন বলেন, আমার কানে না এলেই হলো। আমাকে কাজগুলো করতে দিন। আমি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। তাই আমি মাঠ ছেড়ে যাব না, আমি ভয় পাই না। আমার ওপরে আল্লাহ আছেন, নিচে শেখ হাসিনা।’
পদ ছেড়ে দিতে আপত্তি নেই জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘চলে গেলে ভালো হতো। আমারও খুব বেশি আরামের দরকার ছিল। চলে গিয়ে একটু লেখালেখি করা, ঘোরাফেরা করার দরকার ছিল।’
দুটি হলের উদ্বোধন
এদিকে অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত থেকে দুটি হলের উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। দুটি হলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের জুলাই মাসে। এ হল নির্মাণে ব্যয় হয় ২২ কোটি টাকা। ৯ অক্টোবর হলের নির্মাণকাজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দেন ঠিকাদার। এ হলের আসন রয়েছে ৭৫০টি। অন্যদিকে অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান হলের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। এ হলের কাজ এখনো শেষ হয়নি। পাঁচতলাবিশিষ্ট এ হলের তিন তলার কাজ এখন পর্যন্ত শেষ হয়েছে। এ ছাড়া পানির সংযোগ এখনো দেওয়া হয়নি। বর্তমানে ১১২ জন শিক্ষার্থী এ হলে থাকার সুযোগ পাবেন।
কারা থাকবেন হলে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে সব বিভাগের ছাত্ররা থাকার সুযোগ পাবেন। আগামী রোববার এ হলে ছাত্র ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের আবেদন যাচাই–বাছাই করে ভর্তি করানো হবে।
এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আবেদনের জন্য ১০০ টাকা ও হলে ওঠার জন্য আরও ১ হাজার টাকা দিতে হবে। তবে ঠিক কবে থেকে শিক্ষার্থীরা এ হলে উঠতে পারবেন তা চূড়ান্ত করা হয়নি।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ সজীব কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, আবাসিক শিক্ষক নিয়োগ ও লোকবল নিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। এ কাজগুলো করে ছাত্রদের হলে ওঠানো হবে। সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা এ হলে থাকার সুযোগ পাবেন।
অন্যদিকে অতীশ দীপংকর হলের মোট আসন ৩১২টি হলেও কাজ শেষ না হওয়ায় বর্তমানে ১১২ জন শিক্ষার্থী থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। আবেদনে পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসেই তাঁদের নাম প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। এ হলে পাহাড়ি ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ হলও সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য।
জানতে চাইলে অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জ্ঞানরত্ন শ্রমণ প্রথম আলোকে বলেন, হলের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এ ছাড়া লোকবলের অভাব রয়েছে। তবে ছাত্র ভর্তি করা হয়েছে। পানির সংযোগ আর লোকবল পেলে আগামী ১ নভেম্বর তিনি হল চালু করতে পারবেন।
অন্য হলে আসন বরাদ্দের উদ্যোগ নেই
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে মোট হল চালু রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে ছাত্রদের সাতটি আর ছাত্রীদের পাঁচটি। ছাত্রীদের হলগুলো অস্থায়ীভাবে কর্তৃপক্ষ আসন বরাদ্দ দিলেও ছাত্রদের হলে দেওয়া হয় না। এ সাতটি হল নিয়ন্ত্রণ করেন শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতা। কোন কক্ষে কে থাকবেন এগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেতারা করে থাকেন। আসন বরাদ্দ না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সুযোগ করে দিয়েছে। নিয়ম মেনে সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুনে এ সাত হলে আসন বরাদ্দ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এরপর ২০১৯ সালে ও গত বছর দুই দফায় হলে ছাত্র ভর্তির বিজ্ঞাপন দিলেও তা কাগজে–কলমেই রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে এমন আশা ছেড়ে দিয়েছেন। ছাত্রলীগের চাপের কারণে কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ দিচ্ছে না এমন কথাও বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিভিন্ন পদে থাকা শিক্ষকেরা।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা চেষ্টা করছেন। আসন বরাদ্দের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। শিগগিরই তাঁরা বরাদ্দ দেবেন।