পঞ্চগড়ে চায়ের অনলাইনভিত্তিক নিলাম কেন্দ্রের উদ্বোধন করলেন বাণিজ্যমন্ত্রী
পঞ্চগড়ে আজ শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় সরকারি মিলনায়তনে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র (অনলাইনভিত্তিক) কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি । প্রথম দিন সৌজন্য নিলামে ২০০ কেজি চা বিক্রি করা হয়। তবে পুরোদমে এ নিলামের কাজ শুরু হতে আরও কিছু সময় লাগবে।
স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যান্ড টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এ আয়োজন করেছে। মন্ত্রী এ সময় বলেন, বাংলাদেশের চা উৎপাদনের ৬৫ শতাংশ চা সিলেট অঞ্চলে উৎপাদিত হয়। সেই সিলেট অঞ্চলে চায়ের নিলাম কেন্দ্র করতে সময় লেগেছে ১০০ বছর। কিন্তু উত্তরবঙ্গে চা উৎপাদনের মাত্র ২০ বছরের মাথায় সরকার একটা নিলাম কেন্দ্র চালু করতে পারছে।
নিলাম কেন্দ্র করার উদ্দেশ্য মনে করিয়ে দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খালি অকশন সেন্টার (নিলাম কেন্দ্র) করলাম আমরা, কিন্তু আমাদের কৃষকদের (চা চাষি) লাভ হলো না, তাঁরা পয়সা পেলেন না, তাহলে এই অকশন সেন্টার হবে মূল্যহীন। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো কৃষক যেন তাঁদের ন্যায্যমূল্য পান। কৃষকেরা যেন কারও হাতের পুতুল না হয়।...আমি সবার সঙ্গে কথা বলেছি। ডিসি (জেলা প্রশাসক) সাহেব বলেছেন, তিনি প্রতি কেজি ১৮ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু কৃষকেরা সেটাও পাচ্ছেন না। ১৪ টাকা, ১৫ টাকা এ রকম দামে তাঁদের বিক্রি করতে হয়। এ রকম দামে বিক্রি করলে কিন্তু একসময় আমাদের উত্তরবঙ্গের চা-বাগান বন্ধ হয়ে যাবে।’
জেলা প্রশাসন ও চা বোর্ডের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘যখন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়, তখন কিছু সময়ের জন্য হলেও কৃষকেরা দাম ভালো পান। তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত ঘন ঘন পরিচালনা করতে হবে। এ ছাড়া কাঁচা চা পাতার আর্দ্রতার কারণে ২০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত নাকি ওজন কমিয়ে দেখান কারখানার মালিকেরা। তাহলে এটা তো তুঘলকি ব্যাপার, যা ইচ্ছে তাই। সেটা হবে কেন? এভাবে কৃষকদের অসহায়ত্বের সুযোগ যেন কেউ না নেয়।’
চা কারখানা মালিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, তাঁদের ব্যবসা ঠিক আছে, কিন্তু তাঁদের এটাও মনে রাখতে হবে কৃষক যেন ন্যায্য মূল্য পান। তাঁদের কারখানা আছে বলে তাঁরা সুযোগ নেবেন, সেটা সরকার করতে দেবে না।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রেলপথমন্ত্রী ও পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম, পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম, রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যান্ড টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আমিরুল হক।
বক্তব্য শেষে অনলাইনে চা নিলাম কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। সৌজন্য নিলামে সুপ্রিম টি লিমিটেডের তৈরি ২০০ কেজি চা নিলামে তোলা হয়। নিলামে ১৫ জন অংশ নেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ প্রতি কেজি তৈরি চা ৫৪৩ টাকা দরে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে কিনে নেয়।
স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যান্ড টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আমিরুল হক বলেন, নিলাম কেন্দ্রের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ করবে তাঁদের সংগঠন। আর ব্রোকার হাউসগুলো নিলামকারীদের নিয়ে নিলামের আয়োজন করবে। নিলামে অংশ নিতে হলে ব্রোকার ও নিলামকারীদের টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হতে হবে। চা বোর্ড একটি মিটিং আয়োজন করে নিলামের সময়সূচি তৈরি করবে। সেটা অনুযায়ী পরবর্তী নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি মাসে অন্তত দুটি নিলাম হতে পারে, তবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হতে কিছু সময় লাগবে জানিয়ে আমিরুল হক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নিলামের ১৪ দিন আগে ব্রোকারদের কাছ থেকে নিলামকারীরা চায়ের নমুনা সংগ্রহ করবেন। সেই নমুনা অনুযায়ী তাঁরা নিলাম ডাক দেবেন। এরপর তাঁরা ব্রোকার হাউসের কাছে টাকা জমা দেবেন। চা নিলাম হয়ে যাওয়ার পর ব্রোকার হাউসগুলো সরকারি রাজস্ব, ওয়্যারহাউসের ভাড়া ও নিজের কমিশন কেটে নিয়ে চায়ের মালিককে তাঁদের মূল্য পরিশোধ করবে। অনলাইনে এই নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ায় দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে নিলামকারীরা অংশ নিতে পারবেন।