বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাগেবুল আহসানের পক্ষে মোটর শোভাযাত্রা করেছেন সমর্থকেরা। আজ রোববার দুপুরে শহরের ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ থেকে এ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে এক হাজারের বেশি মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসে নৌকার সমর্থকেরা অংশ নেন।
শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন জেলা যুবলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা। শোভাযাত্রার শুরুতে নৌকার প্রার্থী রাগেবুল আহসান কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তবে তিনি শোভাযাত্রায় অংশ নেননি।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শোভাযাত্রার আগে সকাল থেকেই জেলা ও উপজেলা থেকে আসা কর্মী-সমর্থকেরা আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে মোটরসাইকেল নিয়ে জড়ো হন। দুপুর ১২টায় মাঠে সমাবেশ হয়। সেখানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান ছাড়াও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি টি জামান নিকেতা, জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার ও সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বক্তব্য দেন। বেলা একটার দিকে মঞ্জুরুল আলম, শুভাশীষ পোদ্দার ও আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে মোটর শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি আলতাফুন্নেছা মাঠ থেকে শহরের রোমেনা আফাজ সড়ক, পুরাতন কোর্ট হাউস স্ট্রিট, সার্কিট হাউস মোড়, সাতমাথা হয়ে শহর প্রদক্ষিণ শেষে পুরো সদর উপজেলা প্রদক্ষিণ করে।
এদিকে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন আপেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি মাসুদার রহমান। তিনি বলেন, ‘নৌকার কর্মী-সমর্থকেরা আচরণবিধির তোয়াক্কা করছেন না। রাস্তায় মানুষের চলাচল বন্ধ করে নৌকার পক্ষে সমাবেশ করা হয়েছে। সকাল থেকেই শহরে নৌকার প্রচারণা ও মাইকিং চলছে। অথচ আমাকে সভা-সমাবেশ করতেও বাধা দেওয়া হয়েছে। মাইকিং করতেও বাধা দেওয়া হয়েছে। নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ, নৌকার সমর্থনে বিশাল মোটর শোভাযাত্রা নিয়ে শহর দাপানো হলেও রিটানিং কর্মকর্তা এসব দেখেও দেখছেন না। ক্ষমতাসীন দলের কাছে তিনি অসহায়। জেলা প্রশাসককে রিটানিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সার্বিক পরিবেশ দেখে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে হচ্ছে না।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের আচরণবিধিতে উল্লেখ আছে, ‘কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বা উহার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁহাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, নৌযান, ট্রেন বা অন্য কোনো যান্ত্রিক যানবাহন সহকারে মিছিল কিংবা মশালমিছিল বের করতে পারবেন না কিংবা কোনোরূপ শোডাউন করতে পারবেন না। কোনো প্রার্থী ও তাঁহার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি বিধিমালা লঙ্ঘন করলে অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাগেবুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌকার সমর্থনে মিছিল করা আচরণবিধি লঙ্ঘন কি না, সেটা বলতে পারব না। তবে মিছিলে আমি অংশ নিইনি।’
প্রচারণায় বাধা দেওয়ার বিষয়ে রাগেবুল আহসান বলেন, ‘কোনো প্রার্থীর প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদার রহমান ও আমি পাশাপাশি বাসায় থাকি। শিষ্টাচারের স্বার্থেই তাঁর বাসায় নৌকায় ভোট চাইতে আমার স্ত্রীকে যেতে দিইনি। অথচ তিনি আমার বাসার দেয়ালে আপেল মার্কার পোস্টার সেঁটেছেন। তবু তাঁকে সম্মান দেখিয়ে আমি এ বিষয়ে কিছুই বলিনি। সরকারি দল বলেই আমাদের যত দোষ।’
রিটানিং কর্মকর্তা ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রার্থীরা যাতে আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালান, তা পর্যবেক্ষণের জন্য দুই নির্বাচনী এলাকায় ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। যখনই যে প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে, তখনই সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে তাঁরা সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, কোনো প্রার্থী মোটর শোভাযাত্রা বা শোডাউনের মাধ্যমে আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনে বিষয়টি জানানো হবে।