জনগণ ক্ষমা না করলে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে না

রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে গণজমায়েত করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ রোববার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণজমায়েত কর্মসূচি পালন করেছে। আজ রোববার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে এই কর্মসূচিতে জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা বক্তব্য দেন।

তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে আওয়ামী লীগকে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। জনগণ ক্ষমা করলে তবেই তারা রাজনীতি করতে পারবে। তবে সবার আগে গণহত্যার জন্য তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে ঢাকার জিরো পয়েন্টে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে আজ বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় আওয়ামী লীগ। তাদের এ কর্মসূচি ঘোষণা পর সারা দেশে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও এর প্রতিবাদে ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে কর্মসূচি হাতে নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

আজ দুপুর ১২টার আগেই শিক্ষার্থীরা জমায়েত হতে শুরু করেন। ১২টায় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। সেখানে তাঁরা ‘এক হয়েছে বাংলাদেশ, ফ্যাসিবাদের দিন শেষ’, ‘হত্যাকারী, স্বৈরাচারী, শেখ হাসিনার গলায় দড়ি’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিব রক্ত’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধরে ধরে জেলে ভর’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আবদুর রহিমের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, মেহেদী সজীব, মাসুদ রানা, মেহেদী হাসান, সালাহউদ্দিন আম্মার প্রমুখ।

গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী বলেন, ‘১৫ বছর দুঃশাসন চালিয়ে আওয়ামী লীগ আবার বাংলার মাটিতে রাজনীতি করতে চায়। তারা নূর হোসেনকে ব্যবহার করে ফিরতে চায়। তারা কি ক্ষমা চেয়েছে? বাংলার মাটিতে আর কোনো ফ্যাসিবাদকে জন্মাতে দেবেন না। পৃথিবীর যে প্রান্তেই ফ্যাসিবাদ জন্ম নিক, সেখানেই বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের গল্প বলতে হবে। পৃথিবীর কোনো ফ্যাসিবাদী সরকার ফিরতে পারেনি। তাঁরা দুঃসাহস দেখাচ্ছে। বাংলার মাটিতে তাদের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যদি জনগণ ক্ষমা না করে, তাহলে তাদের রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।’

মেহেদী সজীব বলেন, ’৯১–এর গণ–অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে। কিন্তু ’২৪-এর শহীদ ছাত্র-জনতার সঙ্গে তাঁরা বেইমানি করতে চান না। ’২৪-এর শহীদদের রক্ত নিয়ে কাউকে খেলতে দেওয়া হবে না। যারা এখনো বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের চেষ্টা সফল হবে না। ছাত্র-জনতা মাঠে আছে, তারা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে মাঠে লড়াই করবে। এই বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে দেওয়া হবে না।

মাসুদ রানা বলেন, ‘আমরা বাকশালকে মানি নাই, হাসিনার ফ্যাসিবাদকেও মানি নাই। শহীদ নূর হোসেন কারও বাপের সম্পত্তি না, নূর গণতন্ত্রের প্রতীক। সব গণতন্ত্রের প্রতীককে আওয়ামী লীগ তার বাপ-দাদার সম্পত্তি বানিয়েছিল। এই বাপ-দাদার সম্পত্তিকে এখন তারা সবার সম্পত্তি করে তুলছে। তাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রশ্নে সবাই এক। আওয়ামী লীগ প্রশ্নে কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো বিভেদ নেই। জুলাই এখনো শেষ হয়নি। কিন্তু এখন তারা বলছে, ভয়ংকর হয়ে তারা ফিরবে। এই সমর্থকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়াই করতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমা না চায়, এই গণহত্যার দায় নিতে না চায়, এই বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগকে চায় না জনগণ।’