ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টানা ২৪ ঘণ্টা ধরে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল চারটা থেকে যানজট শুরু হয়ে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুরো ৩৪ কিলোমিটার যানজটে পরিণত হয়। দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী ও যানবাহনের চালকেরা।
পুলিশ, দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকা অবমাননাসহ অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ভারতের সীমান্ত অভিমুখে গতকাল সকাল থেকে লংমার্চ শুরু করে বিএনপির তিন সংগঠন—ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সময় চার হাজারের অধিক যানবাহন সরাইল বিশ্বরোড মোড় অতিক্রম করে। এতে বুধবার বিকেল চারটার পর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড়ের তিন দিকে যানজট শুরু হয়। এ যানজট চলতে থাকে টানা ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের যানজট কমতে থাকে। কিন্তু বাড়তে থাকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যানজট। এ যানজট ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুরো ৩৪ কিলোমিটার অংশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে হবিগঞ্জের মাধবপুর পর্যন্ত বিস্তৃতি ঘটে। এখনো রয়েছে যানজট।
আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সময়ে মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অংশে অবস্থান করে দেখা গেছে, মহাসড়কের পুরো অংশে যানজট লেগে আছে। মহাসড়কে যানজটে আটকা পড়েছে হাজার হাজার যানবাহন। এতে দুর্ভোগে পড়েন অসংখ্য চালক ও যাত্রীরা।
পান্না আক্তার নামের এক যাত্রী বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিলেটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকার বাসে চড়েন। আজ বেলা দুইটায় তাঁর সঙ্গে কথা হয়। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আজ ভোরে সিলেটে গিয়ে পৌঁছার কথা, কিন্তু আজ সন্ধ্যার মধ্যে সিলেটে গিয়ে পৌঁছাতে পারব কি না জানি না।
শাহবাজপুর এলাকায় শরিফুল আলম নামের এক যাত্রীর সঙ্গে বেলা সোয়া দুইটায় কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত ১২টায় আশুগঞ্জে আসি। এরপর এ অংশ (২০ কিলোমিটার) আসতে বেলা দুইটা পার হলো। শিশুসন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিলেটে যাচ্ছি। সবাই অধৈর্য হয়ে পড়েছে। আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি।’
পণ্যবাহী ট্রাকচালক শাহীন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে ঢুকছি। অহন বেলা দেড়টা বাজে। এটুকু অংশ (১৫ কিলোমিটার) আসতে এই সময় (১৫ ঘণ্টা) লাগছে। এখানে হোটেলে খাবারও নাই। কিছু খাইতেও পারতেছি না।’
হোটেলে খাবারসংকট
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের পাশের হোটেলে খাবারসংকট দেখা দিয়েছে। যেসব হোটেলে সামান্য খাবার পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মূল্য রাখা হচ্ছে দ্বিগুণ। ফুটপাতের এক দোকানি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সব খাবার শেষ। আমরাও কোথায় গিয়ে পণ্য আনতে পারছি না।’
সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মারগুব তৌহিদ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল থেকে এখানো সড়কেই আছি। কিছুক্ষণ আগে থেকে ধীরগতিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানবাহন চলছে। আজ রাত ৯–১০টার মধ্যে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে। মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সরাইল, আশুগঞ্জ ও বিজয়নগর থানার পুলিশ আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন।’