প্রচারণায় এলে প্রার্থীকে হাসপাতালে পাঠানোর হুমকি
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় এক প্রার্থীকে হাসপাতালে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন এক ইউপি চেয়ারম্যান। উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অশোক কুমার বড়ালের নির্বাচনী সভায় তাঁকে পাশে রেখে ওই হুমকি দেওয়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার চিতলমারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন হুমকি পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু জাফর মো. আলমগীর হোসেন ওরফে আলমগীর সিদ্দিকী। তিনি উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি। ‘হত্যা খুন জখমের হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই প্রার্থী।
দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে চিতলমারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখানে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল (মোটরসাইকেল প্রতীক), আবু জাফর মো. আলমগীর হোসেন (দোয়াত-কলম প্রতীক) এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম অহিদুজ্জামান (আনারস প্রতীক) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সে প্রার্থী, নির্বাচন করবে, ভোট চাবে কোনো আপত্তি নাই। কাওয়াজ বাধালি কেউরি ছাড়া হবে না। আমার এলাকা, আমি একজন নৌকার চেয়ারম্যান, আমার এলাকাডা শান্তিতে রাখতি হবে। সেই পরিবেশে আমি কথা বলছি।
বর্তমান চেয়ারম্যানের পক্ষে ১ মে উপজেলার চরচিংগড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক নির্বাচনী সভায় কলাতলা ইউপি চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া প্রকাশ্যে দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী আলমগীরকে হুমকি দেন। ওই বক্তব্যের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি বলছেন, ‘আমি নাম বলি, আলমগীর সিদ্দিকী। তাঁর নির্বাচন আসলি একটা গোন আসে, জোগা আসে।...ও দলের কেউ না, আমার দলের একটা সদস্য ওর ফ্যামিলিতেও কেউ নাই। ও দলের নাম ভাঙ্গায়। আমার কথা হলো গি যে আমার ইউনিয়নে যদি ঢোকে, আমি দেখব। অন্য ইউনিয়নে ঢুকলি তারা দেখতে হবে। দেখতে হবে কি, আগে যেটুকু হইছে এবারের সুটি (মাইর) ও মেডিকেল ছাড়া ওর জন্য বরাদ্দ কোনো কিছু নেই। ওর মেডিকেলে এবার যাওয়া লাগবে। ওর কলাতলার মাঠে এই সেন্টার ওর এই ডা। ও এই সেন্টারে আইসে ভোট দিতে পারলে চেয়ারমেনিই করব না। ও এই সেন্টারে আইসে একটু ভোট দিক তারপরে আমি দেখব।’
লিখিত অভিযোগে প্রার্থী আবু জাফর মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয় মাঠে চেয়ারম্যান প্রার্থী অশোক কুমার বড়াল ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাহাতাব উজ্জামানের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে আমাকে নির্বাচনী এলাকায় ঢুকলে মেডিকেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন। এটি সংসদ সদস্যের নির্দেশ বলে বাদশা চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়েছেন এবং আমাকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন।’
আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কমিশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সংসদ সদস্যের নাম ব্যবহার করে নিজেকে নৌকার চেয়ারম্যান দাবি করে কলাতলা ইউনিয়নের কেন্দ্রসহ সব কটি কেন্দ্র দখল করে ভোট কাটার হুমকি দিচ্ছেন বাদশা চেয়ারম্যান।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অরবিন্দ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা ভিডিও ক্লিপ আমরা পেয়েছি। ওই চেয়ারম্যানকে শোকজ করা হচ্ছে। কোনো সন্তোষজনক জবাব না হলে আমরা কমিশনে জানাব।’
তবে ওই বক্তব্যের বিষয়ে কলাতলা ইউপি চেয়ারম্যান মো. বাদশা মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কি প্রার্থী নাকি। ঘটনা, সে একজন খুনি। এলাকায় আসলে একটা গ্যাঞ্জাম-ফ্যাসাদ বাধায় যায়, এ কারণে আমি কথাগুলো বলছি। সে প্রার্থী, নির্বাচন করবে, ভোট চাবে কোনো আপত্তি নাই। কাওয়াজ বাধালি কেউরি ছাড়া হবে না। আমার এলাকা, আমি একজন নৌকার চেয়ারম্যান, আমার এলাকাডা শান্তিতে রাখতি হবে। সেই পরিবেশে আমি কথা বলছি।’