শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। পদ্মা নদীবেষ্টিত ওই ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডের দুজন সদস্য ভোটারদের আপ্যায়ন করেছেন। সাধারণত নির্বাচন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ঘটনা ঘটলেও এই দুই ইউপি সদস্য প্রার্থী যৌথভাবে ভোটারদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন।
তবে এভাবে ভোটারদের আপ্যায়ন করে তাঁরা নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এ ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারে নির্বাচন কমিশন। যদিও ওই দুই প্রার্থী বলেছেন আপ্যায়নের বিষয়টি তাঁদের স্থানীয় সংস্কৃতির অংশ।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাথাভাঙা গ্রামে মৃধাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আজ শনিবার দুপুরে ঘটনা ঘটেছে। ওই ওয়ার্ডের সদস্যপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সদস্য আহাম্মদ আলী ও সাবেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান। ১৯৯২ সাল থেকে তাঁরা দুজনই ঘুরেফিরে ওয়ার্ডটিতে নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়,উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নটির চারপাশে পদ্মা নদী। এই ইউনিয়নের মানুষ নৌপথেই চলাচল করেন। এখানে ভোটার আছেন ১৭ হাজার ২৩৭ জন। চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী, ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৬ জন ও ৩টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পদ্মা নদীর তীরঘেঁষা দক্ষিণ মাথাভাঙ্গা গ্রাম। গ্রামটি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। এখানে ভোটার রয়েছে ১ হাজার ৭৩৮ জন। এ নির্বাচনে সদস্যপদের জন্য প্রতিদ্বন্দিতা করছেন বর্তমান সদস্য আহাম্মদ আলী ও সাবেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান। ১৯৯২ সাল থেকে তাঁরা দুজনই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ঘুরেফিরে তাঁরাই নির্বাচিত হচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তাঁদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। ভোটের দিনও তাঁরা ভোটকেন্দ্রের বাইরে একসঙ্গে বসে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। কেন্দ্রের বাইরে একটি বাড়িতে দুই প্রার্থীর উদ্যোগে ভোটারদের ভাত, মাছ ও মাংস খাওয়ানো হচ্ছে। ভোটারদের জন্য আলাদা একটি স্থানে চা ও পান-সুপারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে ওই দুটি স্থানে ভোটারদের আপ্যায়ন করা শুরু হয়।
ভোট দেওয়ার পর দুই ইউপি সদস্যরা দাওয়াতে ভাত খেয়েছি। অনেক বছর ধরেই ভোটের দিনে গ্রামবাসীকে এই দুই প্রার্থী মিলেমিশে আপ্যায়ন করেন। আমরাও ঘটনাটি উৎসব হিসেবে দেখি। আমাদের মধ্যে যাঁর যাঁকে ভালো লাগে, তাঁকেই ভোট দিই। এই আপ্যায়নের সঙ্গে ভোট দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
দক্ষিণ মাথাভাঙ্গা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফসলি জমির মাঠ পেরিয়ে ২ কিলোমিটার হেঁটে ভোটকেন্দ্রে এসেছি ভোট দিতে। কিছুটা ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত ছিলাম। ভোট দেওয়ার পর দুই ইউপি সদস্যরা দাওয়াতে ভাত খেয়েছি। অনেক বছর ধরেই ভোটের দিনে গ্রামবাসীকে এই দুই প্রার্থী মিলেমিশে আপ্যায়ন করেন। আমরাও ঘটনাটি উৎসব হিসেবে দেখি। আমাদের মধ্যে যাঁর যাঁকে ভালো লাগে, তাঁকেই ভোট দিই। এই আপ্যায়নের সঙ্গে ভোট দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।’
৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী আহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটের দিন ভোটাররা সকাল সকাল বাড়ি থেকে বের হন। অনেকে দুই থেকে তিন কিলোমিটার হেঁটে ভোটকেন্দ্রে আসেন। তখন তাঁরা ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত থাকেন। ক্ষুধার্ত–ক্লান্ত মানুষদের আপ্যায়ন করা আমাদের এই গ্রামের সংস্কৃতির অংশ। আমরা বিষয়টাকে নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গ হিসেবে দেখি না।’
৩ নম্বর ওয়ার্ডের অপর সদস্য প্রার্থী নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা দুজন এ এলাকার সদস্যপদে নির্বাচন করছি। আমরাই ঘুরেফিরে নির্বাচিত হই। দুজন মিলে ভোটারদের আপ্যায়ন করাচ্ছি। ভোট মানুষের আমানত। যাঁকে বিশ্বাস করে দেবেন, তিনি নির্বাচিত হবেন। আমরা দুই প্রার্থী মিলেমিশে এলাকার মানুষের পাশে থাকি। তাই ভোটের দিনেও দুজনে মিলেমিশে সবাইকে আপ্যায়ন করছি।’
জানতে চাইলে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রুবায়েত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্গম চরে নির্বাচনের পরিবেশ ভালো রাখা অনেক চ্যালেঞ্জের। প্রার্থীরা যাতে আচরণবিধি মেনে চলেন, তার দিকে আমরা নজর রাখছি। কেন্দ্রে যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়, তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আর ভোটারদের কোনো প্রার্থী আপ্যায়ন করতে পারবেন না। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’