বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জে বাজারে বেড়েছে মরিচের সরবরাহ, কমেছে দাম

কৃষকের কাছ থেকে মরিচ কিনে বস্তায় ভরা হচ্ছে। গত রোববার রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার হাসপাতালপাড়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো

রংপুরের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে কাঁচা মরিচ এখন ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও মরিচের দাম ছিল প্রতি কেজি ২৬০ টাকা।

কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, টানা বৃষ্টির কারণে খেত থেকে মরিচ তোলা না যাওয়ায় বাজারে দাম বেড়ে গিয়েছিল। বর্তমানে আবহাওয়া ভালো থাকায় বাজারে মরিচের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে এর দামও কমে গেছে।

গতকাল বুধবার দিনভর ওই দুই উপজেলার স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাইকারি বাজারে প্রতি মণ কাঁচা মরিচ সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা তা বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি ৮০ টাকায়।  

স্থানীয় পাঁচজন মরিচচাষি ও তিনজন সবজি বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৭ জুন কোরবানির ঈদের দিন পর্যন্ত টানা কয়েক দিন এলাকায় ভারী বৃষ্টি হয়। এতে মরিচের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল। এরপর ক্রমেই মরিচের দাম কমতে থাকে। এখানকার মরিচ কিনে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ঢাকায় নিয়েও বিক্রি করে থাকেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বদরগঞ্জে এবার মরিচ চাষ হয়েছে ২৭০ হেক্টর জমিতে। তারাগঞ্জে হয়েছে ২৬৩ হেক্টরে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বদরগঞ্জে এবার মরিচ চাষ হয়েছে ২৭০ হেক্টর জমিতে। তারাগঞ্জে হয়েছে ২৬৩ হেক্টরে।

বদরগঞ্জের হাসপাতালপাড়া গ্রামের মরিচচাষি বেলাল হোসেন জানান, তিনি এবারে ৬২ শতক জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার মরিচ তুলে বিক্রি করেছেন। গত ১৯ জুন পর্যন্ত প্রতি মণ মরিচ খেত থেকে তুলে তিনি বিক্রি করেছেন ৮ হাজার ৫০০ টাকায়। এর পর থেকে মরিচের দাম কমতে কমতে আজ (গতকাল বুধবার) তা প্রতি মণ ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।

বেলাল হোসেন বলেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি ওই জমিতে মরিচ লাগান; তোলা শুরু করেন গত ১১ মে থেকে। মরিচ চাষে সব মিলিয়ে তাঁর খরচ হয়েছিল প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এতে খরচ বাদে ইতিমধ্যেই তিনি লাভ করেছেন লাখ টাকা। আরও মাস দুয়েক ওই খেত থেকে মরিচ তুলে তিনি বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান।

কয়দিন আগোত এক মণ আকালি (মরিচ) বেচাচি আট হাজার টাকাত। এ্যালা সেই মরিচের দাম কমি যায়া মনটা খুব খারাপ।’
জাহিদুল ইসলাম, তারাগঞ্জের বালাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা

তালুকদামোদরপুর গ্রামের মরিচচাষি আশরাফ উদ্দিন বলেন, মরিচের দাম নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপরে। অতিবৃষ্টিতে মরিচখেতে ফলন কমে যায়, খেত খতিগ্রস্ত হয়। আবার জমি ভেজা থাকায় খেত থেকে মরিচ তোলাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন বাজারে সরবরাহ কমে মরিচের দাম বেড়ে যায়। আবহাওয়া ভালো থাকলে মরিচের ফলনসহ বাজারে সরবরাহ বেড়ে যায়। এর ফলে দামও কমে যায়।

বদরগঞ্জের সবজি বিক্রেতা রফিক হোসেন বলেন, ১৯ জুন পর্যন্ত প্রতি কেজি মরিচ খুচরা বিক্রি করেছেন ২৬০ টাকায়। বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় গতকাল বুধবার বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি ৮০ টাকায়। তবে আবার বৃষ্টি হলে মরিচের দাম বাড়বে।

তারাগঞ্জের বালাপাড়া গ্রামের মরিচচাষি জাহিদুল ইসলাম (৩৫) বলেন, ‘কয়দিন আগোত এক মণ আকালি (মরিচ) বেচাচি আট হাজার টাকাত। এ্যালা সেই মরিচের দাম কমি যায়া মনটা খুব খারাপ।’

মরিচ চাষ করে দাম পড়ে যাওয়ায় অসন্তুষ্টু হয়েছেন তারাগঞ্জের বালাপাড়া গ্রামের মরিচচাষি মন্টু মিয়া, ইব্রাহীম আলী, মেনানগরের ইমরুল কায়েস, সেকেন্দার আলী, বদরগঞ্জের বালুয়াভাটা যাদুনগর গ্রামের ছাইফুল ইসলাম, লিয়াকত হোসেন ও আজগর আলী।

তারাগঞ্জ বাজারে গতকাল দুপুরে আড়াই শ গ্রাম মরিচ কেনেন দিনমজুর ইকবাল হোসেন (৪৬)। তিনি বলেন, ‘আকালির দাম কমি গেইচে। কয়দিন আগোত এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) আকালি কিনচি ৬৫ টাকা দিয়া। সেই আকালি এক পোয়া আইজ কিননো ২০ টাকাত। দাম কমি যাওয়াতে মনটা ভালো।’