এখন ঘরে বসেই মেয়ের খেলা দেখতে পারবেন সাফজয়ী রুপনার মা
১৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৩ ফুট প্রস্থের জরাজীর্ণ কুঁড়েঘরে তাঁদের বসবাস। যেখানে নুন আনতেই পান্তা ফুরায়, সেখানে ঘরে টেলিভিশন থাকাটা বিলাসিতা। সেই ঘরের মেয়ে বাংলাদেশ দলের হয়ে এখন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক। গোলপোস্টের সামনে অতন্দ্রপ্রহরী হয়ে দাঁড়ানো রুপনা চাকমার একেকটা সেভে যখন বাংলাদেশের মানুষ উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন, তখন একটা টেলিভিশনের অভাবে মেয়ের খেলা দেখতে পারেন না তাঁর মা কালাসোনা চাকমা। মেয়ের অনবদ্য কীর্তিতে এবার সেই দুঃখ ঘুচল রুপনার মায়ের। এখন থেকে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নে প্রত্যন্ত গ্রাম ভূঁইয়ো আদামে বাড়িতে বসেই টিভিতে খেলা দেখবেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফজলুর রহমান রুপনাদের বাড়িতে একটি ৩২ ইঞ্চি টেলিভিশন ও ডিটিএইচ ডিশ অ্যানটেনা উপহার হিসেবে পৌঁছে দেন। পরে রাতে টেলিভিশনটি চালুর পর আশপাশের কয়েক বাড়ির সবাই মিলে টিভি দেখেন।
রুপনা চাকমার বড় ভাই অটিল চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রাত সাড়ে সাতটার দিকে আমাদের বাড়িতে টেলিভিশনের সংযোগ দেওয়া হয়। আমরা খুবই খুশি। আশপাশের লোকজন টেলিভিশন দেখতে আসছেন। আমার মা আবেগাপ্লুত হয়েছেন। আগে রুপনার খেলা অন্য লোকজনের মোবাইলে দেখতাম আমরা। এখন ঘরে বসে মা রুপনার খেলা দেখতে পারবেন।’
ইউএনও মো. ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাফজয়ী গোলরক্ষক রুপনা চাকমার পরিবারের কাছে একটি টেলিভিশন ও ডিটিএইচ ডিশ অ্যানটেনা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। রুপনার পরিবার এখন ঘরে বসে টেলিভিশন দেখতে পারবে। বাড়ি নির্মাণের বিষয়টি এখনো বিস্তারিত জানানো হয়নি। তবে জমি পরিমাপ করে নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার রুপনাদের ঘরের অবস্থা দেখে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান একটি বাড়ি নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। রুপনা চাকমাকে বাড়ি নির্মাণ করে দিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
রুপনার ভাই অটিল চাকমা বলেন, ‘অভাবে আমরা কেউ লেখাপড়া করতে পারিনি। আমরা দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে রুপনা সবার ছোট। অন্য বোনটির বিয়ে হয়ে গেছে। সবার বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা থাকেন। আমি, আমার স্ত্রী, দুই সন্তান, মা ও রুপনা একসঙ্গে থাকি। ছোট দুই কক্ষে আমরা পাঁচ সদস্য গাদাগাদি করে থাকি। রুপনা ছুটিতে এলে অন্য বাড়িতে থাকতে হয়।’
রুপনার মা কালাসোনা চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়ে এখন দেশের গর্ব। তার এই অর্জনে আমরা সবাই আনন্দিত। আমার একটা দুঃখ, ছুটি পেলে বাড়িতে এলে মেয়েকে ভালো কিছু খাওয়াতে পারিনি। বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করতে পারিনি। সরকারের কাছ থেকে একটি ঘর পাব বলে শুনেছি। তখন হয়তো ছুটিতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারবে। মেয়ে বন্ধু ও সহপাঠী নিয়ে আসতে পারবে। আমাকে প্রায় বলত, “আমার বাড়িতে অনেকে আসতে চায়।”’