পুলিশের সামনে আ.লীগ নেতাদের দরপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় অভিযোগ, ভিডিও ভাইরাল

কুষ্টিয়া জেলার মানচিত্র

কুষ্টিয়া পৌরসভায় পুলিশের সামনে ঠিকাদারের কাছ থেকে হাটবাজারের ইজারার দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ৩৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দরপত্রের বাক্স ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ। এক ব্যক্তি সেখানে দরপত্র ফেলতে গেলে সেটি কেড়ে নিয়ে ফেলে দেন কয়েকজন।

এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ঠিকাদার ইব্রাহিম হোসেন। তবে পুলিশ আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত সেটি এজাহার হিসেবে তালিকাভুক্ত করেনি।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, একটা অভিযোগপত্র পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঠিকাদার ইব্রাহিম হোসেন অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, পৌরসভার ছয়টি হাটবাজারের দরপত্র জমা দিতে তিনি পৌর মেয়রের কার্যালয়ের বারান্দায় রাখা দরপত্র বাক্সে ফেলতে যান। এ সময় সেখানে আগে থেকে থাকা কয়েকজন ব্যক্তি তাঁর দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বাধা দিলে তাঁরা মারধর করে হাতে থাকা সব দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে নিচে ফেলে দেন। নিচে থাকা সন্ত্রাসী দলের অন্য সদস্যরা দরপত্রগুলো ছিঁড়ে পাশের নালায় ফেলে দেন।

অভিযোগপত্রে পৌর কাউন্সিলর কৌশিক আহমেদ, ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আফিল উদ্দিন, শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক হাসিব কোরেশী ও সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফেরদৌস ও ছাত্রলীগ নেতা সুজন ঘোষকে আসামি করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ২০-২৫ জনকে। এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ঠিকাদার ইব্রাহিম দরপত্র ফেলতে যাচ্ছেন। এ সময় কয়েকজন যুবক তাঁর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। একজনকে জিজ্ঞাসা করতে শোনা যায়, কোন হাটের ইজারা ফেলা হচ্ছে? দরপত্র বাক্সে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একজন সহকারী উপপরিদর্শক। পাশে দাঁড়িয়ে আরও দুজন পুলিশ। একপর্যায়ে ইব্রাহিম বাক্সে দরপত্র ফেলতে গেলে এক যুবক তাঁর হাত থেকে দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে মেঝেতে ফেলে দেন। আরেক যুবক মেঝে থেকে সেগুলো কুড়িয়ে নিচে ফেলে দেন। কয়েকজনকে দৌড়াদৌড়ি করতেও দেখা যায়। তবে এ সময় পুলিশকে তৎপর হতে দেখা যায়নি।

আরও পড়ুন

এর আগে গতকাল দুপুরে কুষ্টিয়া পৌর মেয়রের কার্যালয়ে হাটবাজারের দরপত্র জমা দিতে গেলে আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা দরপত্র কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ করেন ঠিকাদার ইব্রাহিম। পরে তিনি এ বিষয়ে পৌর মেয়র বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের হাটবাজার ইজারা দেওয়ার জন্য গত ২৫ জানুয়ারি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১০টির মধ্যে ৭টি বাজারের ইজারা নেওয়ার জন্য দরপত্র কেনেন ইব্রাহিম হোসেন ও তাঁর কয়েকজন সহযোগী। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ইব্রাহিম হোসেন দরপত্র সঙ্গে নিয়ে একাই জমা দিতে যান মেয়রের কার্যালয়ে। যাওয়ার পরই ইব্রাহিমের কাছে দরপত্র দেখতে চান স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মানব চাকী, আওয়ামী লীগ নেতা আফিল উদ্দিন, ছাত্রলীগ নেতা হাসিব ও ফেরদৌস। ইব্রাহিম অপারগতা প্রকাশ করলে মারধর করে তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়। এ সময় পাশেই কয়েকজন পুলিশ সদস্য থাকলেও তাঁরা নিশ্চুপ ছিলেন।

একটি সূত্র জানিয়েছে, কুষ্টিয়া পৌর এলাকার সবচেয়ে বড় ম আ রহিম সুপারমার্কেটসংলগ্ন মাছ ও তরকারি বাজারের ইজারার সরকারি দর ছিল ১৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা। এ বাজারের জন্য একটিমাত্র শিডিউল জমা পড়েছে। সেটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আফিল উদ্দিনের। তিনি সরকারি দরে দরপত্র জমা দিয়েছেন। অথচ ইব্রাহিম হোসেন বাজারটির দর দিয়েছিলেন ৩৮ লাখ টাকা, যা দ্বিগুণের বেশি।

অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আফিল উদ্দিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘ঘটনার সময় আমি পৌরসভায় একটি কাজে ছিলাম। ওই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো যোগসূত্র নেই। আমি থাকাকালে একটি গ্যাঞ্জাম হয়েছে বলে শুনেছি, তবে যারা করেছে, তারা কাজটি ভুল করেছে। আমাকে সবাই ভালোবাসে। আমি এসব কাজে থাকি না।’