পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বললেন, বরিশাল আজ মুক্ত হয়েছে
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক বলছেন, বরিশাল আজ মুক্ত হয়েছে। এই বরিশালে এত যে অন্যায়, এত যে অবিচার হয়েছিল, শোষণ হয়েছিল, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়েছিল, সেটাকে রোধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী এবার আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে মনোনয়ন দিয়েছেন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সভায় মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবতকে উদ্দেশ্য করে জাহিদ ফারুক বলেন, ‘আপনি বুঝতে পারবেন না, গত চার বছর আমরা কত কষ্টে অতিবাহিত করেছি। আমরা ভয় পেতাম। কত লোককে তাঁরা আহত করেছে, কত লোককে তাঁরা বেইজ্জত করেছে।’
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, ‘আমরা ভাগ্যবান যে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দিয়ে বরিশালবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। আজকে আমি অভিভূত ছাত্রলীগের এত নেতা-কর্মী এখানে সমবেত হয়েছেন। আজ মনে পড়ে, যখন আমি গুটিকয়েক ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী নিয়ে শুরু করেছিলাম, সে দিন ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলতে সাহস পেত না, লুকিয়ে আমার বাসায় দেখা করেছে। আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই সেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের যাঁরা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেছে। দীর্ঘ চার বছর ধরে আমরা উপেক্ষিত ছিলাম। আমাদের ছেলেদের যেখানে পেয়েছে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। আমি তাঁদের বলেছিলাম, কারও সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে যাবে না।’
বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মো. নিজামুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান, বি এম কলেজের সাবেক ভিপি মঈন তুষার প্রমুখ।
বক্তব্য দেওয়ার সময় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘আমি আজ আমার মনের কথা বলতে চাই। আজকে আমরা বরিশালবাসীর মুখে হাসি ফুটাতে সক্ষম হয়েছি। বরিশালবাসী আজ নিশ্বাস নিতে পারছেন। বরিশালের মানুষ আগামীতে নির্দ্বিধায় বাড়ি করতে পারবেন, বরিশালের মানুষ আগামীতে সুন্দর রাস্তাঘাট পাবেন, তাঁরা আরামে থাকবেন, কোনো ভয় থাকবে না। কাউকে ডেকে নিয়ে বাড়ির সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে রাত ১২টার সময় সেই ব্যক্তি বাড়িতে গেলে তখন তাঁকে সন্ত্রাসবাহিনী পাঠিয়ে ধরে আনার ঘটনা বরিশালে আর হবে না।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আগে বরিশালকে সিঙ্গাপুর বানানোর কথা বলেছি। কিন্তু এসব কথা শুনে এবং বরিশাল শহরের রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখে একজন রিকশাচালক পর্যন্ত আমাদের টিটকারি করে বলেছে যে সিঙ্গাপুর কোথায় গেল?’
আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে উদ্দেশ্য করে জাহিদ ফারুক বলেন, ‘ভাই, আমি নিঃস্বার্থভাবে আপনার জন্য কাজ করেছি। তাই আপনার কাছে অনুরোধ, আপনি জনগণের কাছে যে কমিটমেন্ট করবেন, আপনাকে সেটা রাখতে হবে। আজ সেই দিন এসেছে, বরিশালের আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ আপনাকে বিজয়ী করতে কঠোর পরিশ্রম করবে। তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ, আপনাকে যদি আমরা বিজয়ী করতে না পারি, তাহলে এই হায়েনারা আবার আমাদের ওপরে চেপে বসবে। আমরা আসলে বরিশালবাসীকে একটি সুন্দর, শান্তিময় ও আধুনিক শহর উপহার দিতে চাই।’
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, ‘মেয়র হলে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আপনাকে সাবধান থাকতে হবে। কারণ, নেতাদের পাশেই সুবিধাবাদী লোকজন ঘোরে। তাঁরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলে বিভেদ সৃষ্টি করে। এসব লোকের কথা আপনি শুনবেন না। আপনাকে আপন-পর বুঝতে হবে। অনেক লোক মিষ্টি কথা বলবে, নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য। এদের আপনি প্রশ্রয় দেবেন না। আপনি জেনে রাখুন, এই বরিশালের অনেক লোক আপনাকে ভোট দেবে যাঁরা শান্তিতে বসবাস করতে চায়। শান্তির পক্ষের মানুষের দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে এবং সঠিকভাবে তা পালন করতে হবে। তাহলেই জনগণ এবং আমরা আপনার পাশে আছি এবং থাকব।’