অপহরণ-উদ্ধারের পর ব্যবসায়ী আবার নিখোঁজ, পরে লাশ উদ্ধার
নিখোঁজের দুই দিন পর মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার নির্জন এলাকা থেকে এক ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার বোয়ালী এলাকা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে অপহরণের শিকারও হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। পরে হাত–পা বাঁধা অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়।
নিহত ব্যক্তির নাম ইমান আলী (৬৫)। তিনি জেলার ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের সাইলকাই গ্রামের বাসিন্দা। ঘিওর বাজারের পঞ্চরাস্তা মোড় এলাকায় ইমান আলীর একটি হার্ডওয়্যারের দোকান রয়েছে।
শিবালয় ও ঘিওর থানা-পুলিশ এবং পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন ইমান আলী। বিভিন্ন স্থানে এবং আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও তাঁর সন্ধান পাননি পরিবারের লোকজন। ঘটনার পরদিন ইমান আলীর স্ত্রী মমতাজ বেগম ঘিওর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিবালয় উপজেলার বোয়ালীর লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে একটি নির্জন স্থান থেকে গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ইমান আলীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ নূর-এ আলম বলেন, প্রথমে অজ্ঞাত হিসেবে ওই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে খোঁজ পেয়ে স্বজনেরা এসে ওই ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করেন। ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে পিবিআই। এরপর রাতে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এর আগে ৩ নভেম্বর ইমান আলী অপহরণের শিকার হয়েছিলেন বলে জানায় তাঁর পরিবার। ওই ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়। মামলার এজাহার এবং পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ৩ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঘিওরের পঞ্চরাস্তার মোড় এলাকায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হন ইমান আলী। এ সময় সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা করে ঘিওরের সাইলকাই গ্রামের রিপন হোসেনসহ (৩৪) অজ্ঞাতনামা আরও তিনজন ইমান আলীকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এ সময় তাঁকে মারধর করে নগদ ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ৪ নভেম্বর রাতে জেলার দৌলতপুর উপজেলার ধামশ্বর এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজন ইমান আলীকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করেন।
এরপর ৬ নভেম্বর ইমান আলীর মেজ ছেলে মিলন হোসেন বাদী হয়ে অপহরণ ও অর্থ লুট করার অভিযোগে রিপনসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করে ঘিওর থানায় একটি মামলা করেন। আসামিরা মামলা তুলে নিতে ইমান আলীকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন বলে তাঁর পরিবার থেকে জানানো হয়। এ ঘটনার আগে রিপন হোসেনের কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা সুদে ঋণ নেন ইমান আলীর বড় ছেলে কামাল হোসেন। ওই টাকার জন্য ইমান আলীকে প্রায়ই চাপ দিতেন রিপন।
নিহত ব্যবসায়ী ইমান আলীর মেজ ছেলে মামুন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, অপহরণের সময় তাঁর বাবাকে মারধর ও টাকাপয়সা লুটের ঘটনায় মামলা করার পর থেকে আসামি রিপন মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। মামুনের দাবি, তাঁর বাবাকে রিপন ও তাঁর সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছেন। তাঁর বাবার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আজ বুধবার দুপুরে রিপন হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান বলেন, ইমান আলীকে অপহরণের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। তাঁর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়েও থানায় জিডিও হয়েছে। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।