চুয়াডাঙ্গায় টানা দ্বিতীয় দিনের মতো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলছে। কয়েক দিন ধরেই রাতের বেলায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো শিশির ঝরেছে। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে জনজীবন অনেকটাই থমকে গেছে। আজ শনিবার সকালে কিছু সময়ের জন্য রোদের দেখা মিললেও এতে তেমন তেজ ছিল না।
হিমালয় থেকে আসা শীতল বাতাসের কারণে অঞ্চলটিতে চরম ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলার আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ। এর আগে গতকাল শুক্রবার একই সময়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বাতাসের আর্দ্রতা ৮৮ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছিল।
কোনো এলাকায় তাপমাত্রা যদি ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, তাহলে ওই এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। এ ছাড়া ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, ৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এবং ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে।
চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমে এবার এক মাস আগেই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিয়েছে। গত মৌসুমে ১২ জানুয়ারি থেকে এ অবস্থা তৈরি হয়েছিল। তবে এবার ১৩ ডিসেম্বর থেকেই জেলার ওপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
চলমান মৃদু শৈত্যপ্রবাহে জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পোহাচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষজন। অনেকেই কাজের সন্ধানে বাইরে যেতে পারছেন না। কেউ কেউ বাইরে গেলেও পর্যাপ্ত কাজ পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। অনেকেই আবার বিভিন্ন কাজের জন্য শ্রমিকের ঘাটতির কথা জানিয়েছেন। তাঁদের একজন সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ গ্রামের কৃষক দোয়াল্লিন মোল্লা। তিনি বলেন, এমন ঠান্ডার মধ্যে নিজের জমিতে কৃষিকাজ করার জন্য তেমন শ্রমিক খুঁজে পাচ্ছেন না।
শহরের ফেরিঘাট এলাকায় কথা হয় ভ্যানচালক টোকন সরদারের সঙ্গে। পৌর এলাকার জ্বীনতলাপাড়ার বাসিন্দা টোকন বলেন, ‘কী আর বুলবো মিয়াভাই! এবেড্ডা শীতির কামুড়ডা এট্টু বেশি মনে হচ্চে। দুটো পয়সা ইনকামের জন্নি বাড়িত্তি বাইর হলিউ সেরাম প্যাসেন্দার পাওয়া যাচ্চে না।’
মৎস্যজীবী বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘পুকুরির পানি বরপের মতো ঠান্ডা। পানিতি লাবলিই জমে যাওয়ার মতোন অবস্তা। তাই এক-দুই দিন পরপর মাছ ধরতি যাচ্চি। ডেলি পুকুরি লাবলি ঠান্ডায় মইরে যাতি হবে।’
শীতের এমন তীব্রতায় অসহায় মানুষদের জন্য প্রয়োজনীয় কম্বল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গার শীতার্ত মানুষের জন্য ১০ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে এসব বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে।