সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান ও নয়জন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের বলদিপাড়া-হলদিঘর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আহত লিয়াকত সালমানকে উদ্ধার করে উপজেলার পোতাজিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর গ্রামবাসীর মধ্যে সুমাইয়া খাতুন (১০) নামে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে উল্লাপাড়া পূর্ণিমাগাঁতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহত সুমাইয়া বলদিপাড়া গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে।
আহত গ্রামবাসীর মধ্যে অন্যরা হলেন বলদীপাড়া গ্রামের শওকত আলীর স্ত্রী মনিজা খাতুন (৪০), আবদুস সালামের স্ত্রী আলেয়া খাতুন (৪২), কবির হোসেনর স্ত্রী ওজুফা খাতুন (৩৫), শাহাদত হোসেনের স্ত্রী রেহেনা খাতুন (৩৯), আবদুল হাইয়ের স্ত্রী কুমকুমি খাতুন (৩৩), আবু সাঈদের স্ত্রী আকলিমা খাতুন (৫০), নুরাল প্রাংয়ের স্ত্রী মরিয়ম খাতুন (৫২) ও আলীমুদ্দিনের স্ত্রী মাজেদা খাতুন (৩৭)। তাঁরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
আহত সহকারী কমিশনার লিয়াকত সালমানের সঙ্গে আছেন উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী আবদুল হাই। তিনি বলেন, তাঁর (লিয়াকতের) মাথার মাঝখানে প্রায় ১০টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। মাথায় সিটি স্ক্যান করানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি অনেকটাই ভালো আছেন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বলদিপাড়া-হলদিঘর গ্রামে খাসজমিতে শতবর্ষী ওই মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্প স্থাপন করতে বালু ফেলা কার্যক্রম পরিদর্শনে যান শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার লিয়াকত সালমান। খবর পেয়ে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ান। রাস্তার ওপর একটি কালভার্টের সামনে বাঁশ দিয়ে বাধা তৈরি করেন তাঁরা। এ অবস্থায় ইউএনও ও সহকারী কমিশনার মাঠে মাটি ভরাট করার জন্য বালুর ট্রাক নিয়ে এলে গ্রামবাসী বাধা দেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে গ্রামবাসীর বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে প্রশাসনের লোকজনের হাতে সুমাইয়া নামে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী আহত হয়। এতে স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে ইটপাটকেল ছুড়লে আহত হন সহকারী কমিশনার লিয়াকত সালমা। ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। এ সময় প্রশাসনের লোকজন, পুলিশ, গ্রাম-পুলিশ ও আনসার সদস্যরা মিলে গ্রামবাসীকে লাঠিপেটা করেন। এতে ওই নয়জন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) হাসিবুল ইসলাম বলেন, বলদিপাড়া-হলদিঘর গ্রামে দুটি মাঠ আছে। একটি খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্প করা নিয়ে এলাকাবাসী আগেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সম্প্রতি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমঝোতা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে স্কুলের পাশের মাঠটি সংস্কার করে খেলাধুলার জন্য দেওয়া হবে। আর যে মাঠটি নিয়ে তাঁরা আন্দোলন করছেন, সেটা আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্যই নির্ধারণ করা হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শনিবার মাঠটিতে একটি টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার কথা। রোববার সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা। সেই মোতাবেক সকালে ইউএনও ও সহকারী কমিশনার মাঠটি পরিদর্শনে গেলে গ্রামবাসী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। একপর্যায়ে তারা সহকারী কমিশনার মাথায় আঘাত করেন। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ইউএনওসহ সবাইকে সেখান থেকে নিয়ে আসেন।
ইউএনও তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। শুনেছি স্থানীয় জনগণ মাঠ রক্ষায় মানববন্ধন করেছে। আজও আমাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে শান্তিপূর্ণ আলোচনা হচ্ছিল। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’
মাঠটি রক্ষার দাবিতে গত ১৪ জুলাই বেলা ১১টায় বলদিপাড়া-হলদিঘর মাঠে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন গ্রামবাসী।