শ্রমিকনেতা শহিদুল হত্যা মামলার তদন্তে নজর থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের: পিটার হাস
গাজীপুরের টঙ্গীতে শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিন্দা প্রকাশের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। মামলাটির তদন্তে সার্বক্ষণিক নজর থাকবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
আজ বুধবার রাজধানীর রামপুরায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যালয় পরিদর্শন করে পিটার হাস এসব কথা বলেন। মার্কিন দূতাবাসের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে পিটার হাসের এ বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। শহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন।
ঈদুল আজহার আগে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন–ভাতা না দেওয়ায় গত ২৫ জুন রাত সাড়ে নয়টার দিকে টঙ্গীর সাতাইশ বাগানবাড়ী এলাকার ‘প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেডে’ যান শহিদুল। সেখানে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে কারখানা থেকে বের হয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর তাঁর ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। গুরুতর আহত শহিদুলকে গাজীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ২৬ জুন টঙ্গী পশ্চিম থানায় হত্যা মামলা করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি কল্পনা আক্তার। এতে আসামি হিসেবে যে ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের পাঁচজনই আরেকটি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন নামে ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে মালিকপক্ষের হয়ে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে।
কল্পনা আক্তার অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা মালিকপক্ষের ভাড়াটে সন্ত্রাসী। তারা শ্রমিকনেতা পরিচয় দিয়ে হোক, গুন্ডা পরিচয় দিয়ে হোক, মালিকপক্ষের হয়ে হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মাজাহারুল নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মাজাহারুল বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের টঙ্গী পশ্চিম থানার সাধারণ সম্পাদক।
মামলার বাদী ও স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বকেয়া বেতনের বিষয়টি নিয়ে মধ্যস্থতা করতে যাওয়া শহিদুলসহ তিন শ্রমিকনেতার ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেন ‘হানিফ ম্যানেজার’ নামের এক ব্যক্তি। তিনি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী কামরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। কামরুলের কাছ থেকে কেনা জমিতেই পোশাক কারখানাটি করেছেন মো. সাইফ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। কামরুলের ভাই আমির হোসেন ওই কারখানার ঝুট কিনে বাইরে বিক্রি করেন। শহিদুল হত্যা মামলায় কারখানার মালিক সাইফ উদ্দিন ও কামরুলের নাম নেই।
কামরুল ইসলাম স্থানীয়ভাবে ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। তিনি এলাকায় ঝুটের ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। কল্পনা আক্তারের অভিযোগ, ওই দিন কামরুলের নির্দেশেই তাঁর ম্যানেজার হানিফ নেতৃত্ব দিয়ে শহিদুলের ওপর হামলা চালান।
তবে কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা। হানিফ নামে তিনি কাউকে চেনেন না বা এ নামে তাঁর কোনো ম্যানেজার নেই বলেও দাবি তাঁর।