কুয়াকাটায় এবারের নববর্ষে পর্যটক কমেছে

পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে জড়ো হন পর্যটকেরা। গতকাল বছরের শেষ সূর্যাস্তের মুহূর্তেছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পর্যটকের সংখ্যা কমেছে বলে অভিযোগ করছেন পর্যটন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের ধারণা, এত দিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শীতকালীন ছুটি ছিল। বছরের শুরু থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাবে। এ কারণে দূরদূরান্তের পর্যটকের সংখ্যা সেখানে কমেছে। তবে আশপাশের বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলাসহ এলাকার মানুষের আনাগোনা বেশি লক্ষ করা গেছে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, প্রতিবছরের শেষ দিনে কুয়াকাটায় কয়েক হাজার পর্যটক আসেন। এ সময় সৈকতের জিরো পয়েন্ট, জাতীয় উদ্যান, লেম্বুর চর, শুঁটকিপল্লি, রাখাইন মহিলা মার্কেটসহ আকর্ষণীয় সব পয়েন্ট পর্যটক-দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে মুখর থাকে। কুয়াকাটার প্রতিটি খাবার হোটেল, আবাসিক হোটেল, টি কর্নারগুলোয়ও ক্রেতার ভিড় চোখে পড়ত। তবে এবার জায়গাগুলো প্রায় ফাঁকা পড়ে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণ এবং থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্‌যাপন করার জন্য কুয়াকাটায় বড় ধরনের কোনো আয়োজন ছিল না। প্রতিবছর কিছু অভিজাত হোটেল নিজস্ব পরিসরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও এ বছর তা নেই। এর কারণ উল্লেখ করে হোটেল সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলার সহকারী ব্যবস্থাপক মো. শাহীন আলম বলেন, ১ জানুয়ারি থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাচ্ছে। এ কারণে অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বেড়াতে আসতে পারেননি। এ জন্যই পর্যটকের সংখ্যা কম।

এলাকাটিতে ১৬০টির মতো আবাসিক হোটেল-মোটেল আছে জানিয়ে কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ বলেন, এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির ১৫টি। এবার সব মিলিয়ে মাত্র ২০-৩০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। হোটেল-মোটেলগুলো বলতে গেলে ফাঁকাই থেকেছে।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সভাপতি কে এম বাচ্চু আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘বছরের শেষ দিনটিতে কুয়াকাটা সৈকত পানসে থাকবে, তা আমরা বুঝতে পারিনি। কাঙ্ক্ষিত পর্যটক না থাকায় পর্যটনের সঙ্গে জড়িত ২৬টি পেশার কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। আমরা পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’

কুয়াকাটায় গতকাল মঙ্গলবার বর্ষবরণের তেমন আয়োজন না থাকায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন পর্যটকেরাও। ঢাকার মিরপুর এলাকার বাসিন্দা জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘ভেবেছিলাম বছরের শেষ দিনে কুয়াকাটায় এসে বিভিন্ন রকমের আয়োজন উপভোগ করা যাবে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলাম। কোনো আয়োজন না থাকায় আমরা পুরাই হতাশ হয়েছি।’

বছরের শেষ দিনটিকে আনন্দময় করার জন্য বরিশাল থেকে সপরিবার সেখানে বেড়াতে যান মাহমুদ হাসান। তিনি বলেন, ‘পুরোনোকে বিদায় এবং নতুনকে বরণ করতে আমরা নিজেরাই কিছু আয়োজন করেছি।’

এদিকে কুয়াকাটায় পর্যটক বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুয়াকাটা থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত একটি নৌ রুট চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই নয়াপাড়ার রাখাইনপল্লিকে আরও চমৎকারভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে, যাতে পর্যটকেরা রাখাইন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন। কুয়াকাটার নিকটবর্তী লেম্বুর চরকে আলোকসজ্জিত করাসহ সেখানে পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য রাস্তা তৈরি করা হবে।’