রাজশাহীর সাবেক যুবলীগ নেতার দোকানঘরে বিএনপি কার্যালয়, মায়ের কবরস্থানে হানার অভিযোগ

রাজশাহীতে যুবলীগ নেতার দোকান দখল করে বিএনপির কার্যালয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরের শিরোইল কলোনি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাবেক এক নেতা ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেছেন, তাঁর মায়ের কবরের নামফলক তুলে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের দুটি দোকানঘর দখল করে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কার্যালয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

ওই নেতার নাম তৌহিদুল হক ওরফে সুমন। তিনি রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। নগরের শিরোইল কলোনিতে তাঁর বাড়ি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁর নামে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। তিনি এখন আত্মগোপনে।

তৌহিদুলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল হক ১৯ নম্বর ওয়ার্ড (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সভাপতি। শারীরিকভাবে অসুস্থ বলে দলে নিষ্ক্রিয় তিনি। তবে হুমকি পেয়ে তিনিও ঘরছাড়া বলে দাবি ছেলে তৌহিদুলের।

মায়ের কবরের নামফলক নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে গত রোববার ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন তৌহিদুল হক। তিনি ফেসবুকে কবরের দুটি ছবিও পোস্ট করেন। এর একটিতে কবরের পাশে নামফলক ও ফুলের গাছ দেখা যাচ্ছে। অন্য ছবিতে এসবের কিছুই নেই। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার মা করোনায় ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর কবর গৌরহাঙ্গা গোরস্থানে ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে আসাম কলোনির যুবদল নেতা পরিচয়ে আল আমিনের তাণ্ডবের শিকার আমার মায়ের কবর। সবকিছু খনন করে তুলে উপড়ে ফেলেছে। এই অনুভূতি কষ্টের, জবাব কার কাছে চাইব?’

গতকাল মঙ্গলবার সকালে কবরস্থানে গিয়ে কথা হয় তত্ত্বাবধায়ক আলতাফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ৮ নভেম্বর বিকেলে কয়েকজন ছেলে এসে নতুন কবর খনন করতে চান। আমরা তিনজন দায়িত্বে ছিলাম। তাঁরা এসে তৌহিদুলের মায়ের কবর থেকে নামফলক তুলে ফেলেন। আমরা তাঁদের বললাম, অন্য জায়গায় কবর দেন। তাঁরা (তৌহিদুল হকের পরিবার) তো এই কবরের কাছে আসেন। কিন্তু তাঁরা আমাদের কোনো কথা শুনলেন না। বললেন, সুমন অনেক জ্বালিয়েছে। এখন এসব থাকবে না। আপনারা হটে যান, না হলে অসুবিধা আছে।’

হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তৌহিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মা বেগম তৌফায়ারা মঞ্জু করোনায় ২০২২ সালে ২৬ জুন মারা যান। কবরটি আমরা প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করে ফুলগাছ লাগিয়ে পরিচ্ছন্ন রাখতাম। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টিটু ব্যক্তিগত আক্রোশে দলের নাম ভাঙিয়ে আমার মায়ের কবর উচ্ছেদে মদদ ও আদেশ দিয়েছেন বলে আমি জেনেছি।’

যুবদলের নেতা-কর্মীরা কবরস্থানে গিয়ে তাঁর মায়ের কবরের নামফলক তুলে নিয়ে গেছেন বলে ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেছেন আত্মগোপনে থাকা যুবলীগের নেতা তৌহিদুল হক
ছবি: ফেসবুক স্ক্রিনশট

তৌহিদুল হক অভিযোগ করেন, শিরোইল কলোনি এলাকায় চার বছর আগে তাঁর স্ত্রী রুমা খাতুন ও বাবা রেজাউল হক রেলওয়ের একটি জায়গা ইজারা নেন। ওই জায়গায় দুটি দোকানঘর ছিল। ১৬ ডিসেম্বর নুরুজ্জামানের মদদে তাইফুর রহমান ওরফে তোতা ও সোহান নামের এক ছেলে ভুয়া কাগজ তৈরি করে তাঁর দোকানঘরের ভাড়াটিয়াকে মারধর করে নামিয়ে দিয়ে দলীয় কার্যালয় করেছেন। অথচ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত রেলওয়েকে ইজারামূল্য পরিশোধ করা আছে।

গতকাল দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, সুমনের দোকানঘর দুটি তালাবদ্ধ। সামনে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল, আঞ্চলিক কার্যালয়’ লেখা সাইনবোর্ড। কথা বলার মতো সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।

পরপর দুবার নুরুজ্জামান নির্বাচনে তৌহিদুল হকের কাছে পরাজিত হয়েছেন। সবশেষ ২০২৩ সালের নির্বাচনেও তিনি পরাজিত হন। তিনি মহানগর যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।

তবে সাবেক কাউন্সিলর নুরুজ্জামান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি অসুস্থ মানুষ। কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। আর নির্বাচন করে তো বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে আছেন। তাঁর তো লোকজনই নেই। কারা এ কাজ করেছেন, তিনি বলতে পারবেন না।

১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক আক্তার হোসেন বলেন, তাঁদের দলের পদধারী কোনো লোক এই কাজ করেননি। ওই পাড়ার (শিরোইল কলোনি) ছেলেরা করেছেন।