টানা তিন দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে পঞ্চগড়ে, ঝলমলে রোদে স্বস্তি
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে টানা তিন দিন ধরে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলেও ঘন কুয়াশার দাপট কমে যাওয়ায় আজ রোববার সকাল সকাল দেখা মিলেছে ঝলমলে রোদের। এতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৯টায় জেলার তেঁতুলিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গতকাল শনিবার তেঁতুলিয়া দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তা সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল না। এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায়। এর আগে গত শুক্রবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ছিল চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
আবহাওয়াবিদদের ভাষ্য, কোনো এলাকার দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে ওই এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়।
সে হিসাবে হেমন্তের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে টানা তিন দিন ধরে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর থেকেই উত্তরের হিমেল বাতাসে কাবু হয়ে পড়ছে জনজীবন। কনকনে এই শীতের অনুভূতি থাকছে সকাল পর্যন্ত। তবে কুয়াশা আর আকাশে মেঘের পরিমাণ কমে যাওয়ায় তিন দিনই বেলা বাড়ার সঙ্গে উঠেছে ঝলমলে রোদ। আজ সকাল আটটার মধ্যেই সূর্যের দেখা মেলায় বেলা বাড়ার সঙ্গে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ে। এতে স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এর আগে গতকালও প্রায় দিনভর রোদ থাকায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছিল। গতকাল বিকেলে তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ সকালে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশা না থাকায় সকাল সকাল রোদের মধ্যে কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন সাধারণ মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে রোদের তীব্রতা বাড়ায় বেশ স্বস্তিতে কৃষিজমিতে কাজ করছেন কৃষক ও শ্রমিকেরা।
সকাল নয়টার দিকে পঞ্চগড় সদর উপজেলার কৃষিশ্রমিক সরেন্দ্র চন্দ্র রায় বলেন, ‘রাতিত কুপে (খুবই) ঠান্ডা আছিল। এ্যালা দেখেচু সকালে ভালয় রোদ উঠিচে। এ্যালা আর ঠান্ডা নাগে না। এই রকম রোদ থাকিলে হামার কাজকাম করিতে সুবিদা। ’
মনিরুল ইসলাম নামের অপর একজন শ্রমিক বলেন, ‘কয় দিন তকা (থেকে) তো সকালে তো ভালয় রোদ উঠেচে। কিন্তু বিকাল হইতে না হইতে একাখান বাতাস আসে কাবু করে দেছে। সারা রাতি যে ঠান্ডা বাইর হইলে শরীরটা কাঁপেছে।’
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার সকালে তেঁতুলিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন রেকর্ড করা হয়েছে। বর্তমানে এই এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত আছে। আকাশে মেঘের পরিমাণ কমে গেছে। সেই সঙ্গে সকাল সকাল কুয়াশা কেটে গিয়ে ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে। বর্তমানে হিমালয়ে বায়ুচাপ বেশি থাকায় হিমালয়ের হিম বায়ু সরাসরি তেঁতুলিয়ার দিকে আসছে। এতে রাতে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। তবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও দিনের বেলা ঝলমলে রোদ থাকায় জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।