বিএসএফের ছোড়া ককটেলে অন্ধ হতে বসেছেন কৃষক রবিউল
নিজে কৃষিকাজের পাশাপাশি দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন রবিউল ইসলাম (৫২)। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার তাঁর। ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা এলাকায় বসবাস করায় অন্যান্য দিনের মতো ১৩ এপ্রিল বাড়ির অদূরে সীমান্তঘেঁষা একটি জমিতে গরু বেঁধে ঘাস খাওয়াচ্ছিলেন রবিউল।
তখন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এক সদস্যের ছোড়া ককটেলসদৃশ বস্তুর আঘাতে আহত হয়েছিলেন তিনি। সেই থেকে চোখে দেখছেন না তিনি। কয়েক মাস ধরে চিকিৎসা নেওয়ার পরও অন্ধ হতে বসেছেন কৃষক রবিউল।
রবিউল ইসলাম পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় ধামোর ইউনিয়নের সোনাপাতিলা-ভারিয়াপাড়া এলাকার ঝরু মোহাম্মদের ছেলে। সম্প্রতি রবিউল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। দুই চোখে দেখতে না পাওয়ায় পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি থেকে একেবারে অচল হয়ে পড়েছেন তিনি। স্ত্রী-সন্তানদের সাহায্য নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে তাঁকে।
রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বাড়ির কাছে ভারতের সীমান্তঘেঁষা জমিতে সব সময়ই এলাকার প্রায় সবাই গরুকে ঘাস খাওয়ান। কোনো সমস্যা হয় না। ওই দিন তাঁরা খেত থেকে তোলা মরিচ সেখানে শুকাতে দিয়েছিলেন। হঠাৎ করেই দুজন বিএসএফ সদস্য তাঁর ওপর চড়াও হয়ে এগিয়ে আসেন। তাঁরা শুকাতে দেওয়া মরিচের পলিথিনগুলো টানাহেঁচড়া শুরু করেন। এর মধ্যেই একজন রবিউলকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়ে মারেন। সঙ্গে সঙ্গে স্বজনেরা তাঁকে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে নেন। এরপর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন। ভারত ও নেপালে চিকিৎসা নিয়েও কোনো উপকার হচ্ছে না।
রবিউল আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। অনেক পরিশ্রম করে সংসার চালাতাম। এক মেয়ে ও এক ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি। দুই বছর আগে অল্প একটু জমি কিনে টিনশেডের একটা আধাপাকা বাড়ি করেছি। এখন চোখ প্রায় অন্ধ হয়ে গেছে। কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। সংসারটা এখন ছেলে দুইটার ওপর নির্ভর করছে। আমি তো বেকার হয়ে গেছি। টাকাপয়সা যা ছিল, চিকিৎসা করাতে গিয়ে সব শেষ হয়ে গেছে। এখন চিকিৎসা করানোরও টাকা নাই।’
রবিউলের প্রতিবেশী আক্তার হোসেন বলেন, অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতেন রবিউল। খুবই পরিশ্রমী মানুষ। হঠাৎ করে তাঁর জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে। বাংলাদেশের ভেতরে বিএসএফ ঢুকে তাঁকে এভাবে অন্ধ করে দিয়েছে। এর কোনো বিচার হলো না।
ধামোর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খোরশেদ আলম কুদ্দুস বলেন, সোনাপাতিলা-ভারিয়াপাড়া এলাকাটি ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় স্থানীয় কৃষকেরা প্রায় সময়ই বাংলাদেশ অংশে আবার কোনো কোনো সময় শূন্যরেখায় মরিচ শুকান। ওই দিন দুপুরে রবিউলসহ এলাকার কয়েকজন কৃষক সেখানে মরিচ শুকাতে দিয়েছিলেন। ভারতের ধনিরহাট বিএসএফ ক্যাম্পের কিছু সদস্য কৃষকদের মরিচ নিয়ে যেতে শুরু করলে কৃষকেরা বাধা দেন। এ সময় বিএসএফ সদস্যদের একজন বাংলাদেশের ভেতরে এসে রবিউলকে লক্ষ্য করে ককটেলজাতীয় বস্তু নিক্ষেপ করে চলে যান। এতে চোখেমুখে গুরুতর আঘাত পান তিনি। সেই থেকে এখনো রবিউল দেখা পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন বিজিবির আহ্বানে বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু বিএসএফ ঘটনাটি অস্বীকার করেছিল।