বিরামপুরে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভাপা পিঠার পসরা, বাড়তি আয়ে খুশি নারীরা
কুয়াশাভেজা ভোরে দূর থেকে বোঝা যাচ্ছিল, মিটমিট করে আলো জ্বলছে। কাছে যেতেই দেখা গেল, ব্যস্ত পাকা সড়কের মোড়ে মাটির চুলায় ভাপা পিঠা বানাচ্ছেন নূরজাহান বেগম (৪৭)। গরম-গরম পিঠা কিনতে তাঁর চারপাশে ঘিরে আছেন গ্রামের অনেক নারী-পুরুষ। কেউ পিঠা খাচ্ছিলেন, কেউ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আর কেউ চুলার আগুনের দিকে হাত বাড়িয়ে তাপ পোহাচ্ছিলেন।
এ দৃশ্য দেখা গেছে দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের হাবিবপুর গ্রামে। প্রায় ১০ দিন ধরে বিরামপুর-কাটলা আঞ্চলিক পাকা সড়কের হাবিবপুর মোড়ে অস্থায়ীভাবে পিঠার দোকান দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা নূরজাহান বেগম। তাঁর মতো উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কাঁচা ও পাকা সড়কের মোড়ে মোড়ে শীতের পিঠার দোকান দিচ্ছেন অনেক নারী। দুই সপ্তাহ ধরে বেশি শীত অনুভূত হওয়ায় অস্থায়ী দোকানগুলোতে শীতকালীন পিঠার কদর বেড়েছে।
শীতকালে উপজেলা পরিষদ এলাকা, পৌর শহরের ইসলামপাড়া (পূর্ব পাড়া), কলাবাগান, ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকা, হরিহরপুর, অবসর সিনেমা মোড়, প্রফেসর পাড়া, ইসলাম পাড়া, গাড়ুয়ান পাড়া, নতুন বাজার, কলেজ বাজার, মাহমুদপুর, মুকুন্দপুর, কাটলাসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রধান সড়কের মোড়ে মোড়ে স্থানীয় নারীরা পিঠার দোকান দিচ্ছেন। নারীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কের মোড়ে পিঠার দোকানদার হিসেবে পুরুষের সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো। এর মধ্যে পৌর শহরের পূর্ব পাড়া এলাকায় সকাল ও সন্ধ্যায় বিভিন্ন অলিগলিতে ২০টির বেশি পিঠার দোকান বসে।
পিঠার দোকানি নূরজাহান বেগম বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত দোকানোত চালের পিঠা বানাও। পিঠার সাথে খেজুরের গুড় দ্যাও। হঠাৎ করে এলাকাত বেশি হ্যাল (শীত) পড়িছে, তাই পিঠার কাস্টমার বাড়িছে। সকালে ৩০০টার মতো পিঠা ব্যাচা হয়। এ্যাকটা পিঠার দাম পাঁচ ট্যাকা। আর বিকালবেলা দোকানোত পাঁপড়, আলুর চপ ও তেলপিঠা বানাই। ওলাও (সেগুলো) পাঁচ ট্যাকা করে ব্যাচা হয়। কম দামে পিঠা বেচলে কাস্টমারও বেশি হয়, লাভও বেশি হয়।’
নূরজাহান বেগমের দোকানে পিঠা খেতে এসেছেন ওই গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হালিম। তিনি বলেন, ‘সকালে ঘুমোততে উঠে নূরজাহানের পিঠার দোকানোত আইছি। দুইটা ভাগা (ভাপা পিঠা) খাইছি। এখন চুলার পাড়োত বসে আগুন পোহাছি আর গপ্প করোছি। আগুন পোহা শ্যাষ হলে জমিত কাম করবার যামু।’
শীতকাল ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও মহল্লায় কিছু নারী তাঁদের বাড়ির গৃহস্থালির কাজ সামলিয়ে সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য পিঠাপুলি বিক্রি করছেন। এটিকে এলাকার অনেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। শীতকালে নারীদের এমন কাজকে কীভাবে আয়বর্ধক কর্মসূচি হিসেবে নেওয়া যায়, তা নিয়ে ক্যাম্পেইন করার কথা ভাবছেন বলে জানান গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের কর্মসূচি সমন্বয়ক ফিরোজ আহমেদ।
বিরামপুর উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মোশাররত জাহান প্রথম আলোকে বলেন, এখন নারীরা তো আর পিছিয়ে নেই। শীতকালে নিজ এলাকায় বিভিন্ন ধরনের পিঠার দোকান দিয়ে তাঁরা আয় করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি তাঁদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে আরও কোনো সুযোগ তৈরি করা যায়, তাহলে সেটি আরও ভালো হবে।