পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারার বিরুদ্ধে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ করেছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জি এম হিরা বাচ্চু। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তিনি এ অভিযোগ করেন।
আবদুল ওয়াদুদ রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য। প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, নির্বাচনে তিনি নেতা-কর্মী ও ভোটারদের ফোন করে এবং বাড়িতে ডেকে নিয়ে অন্য প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করতে হুমকি দিচ্ছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী বলেন, প্রতিমন্ত্রী কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করেননি।
দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবার চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান হিরা বাচ্চু (মোটরসাইকেল) ছাড়া আরও দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সামাদ মোল্লা (আনারস) ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক (ঘোড়া)। গত সংসদ নির্বাচনে হিরা বাচ্চু ও আব্দুস সামাদ প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন।
লিখিত অভিযোগে হিরা বাচ্চু উল্লেখ করেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুস সামাদ মোল্লার পক্ষে কাজ করার জন্য ১০ মে থেকে প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ বিভিন্ন নেতা-কর্মী ও ভোটারদের ফোন করে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে ১১ মে তাঁর নির্দেশে পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম একটি সভা ডেকে আব্দুস সামাদকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন। গতকাল বুধবার রাত থেকে প্রতিমন্ত্রী তাঁর গ্রামের বাড়ি পুঠিয়ার বিড়ালদহে অবস্থান করছেন। তিনি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে ডেকে সামাদের পক্ষে ভোট করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। কেউ আপত্তি করলে তাঁকে হুমকি ও চাপ দিচ্ছেন। শুধু তা–ই নয়, সামাদের পক্ষে ভোট করতে প্রতিমন্ত্রী নেতা-কর্মী ও ভোটারদের ফোন করে প্রভাব বিস্তার করছেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, নির্বাচনে প্রভাব সৃষ্টি করতে প্রতিমন্ত্রী মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাঁর প্রভাব ও নির্দেশে পুঠিয়ায় সামাদের পক্ষে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ভোট চাইছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারও। তাঁর বিপক্ষে গেলেই ডাবলু সরকার মানুষকে হুমকি দিচ্ছেন। এতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান প্রার্থী।
জি এম হিরা বাচ্চু প্রথম আলোকে বলেন, ভোটাররা খুবই আতঙ্কে আছেন। এভাবে চলতে থাকলে ভোটাররা কেন্দ্রেই আসবেন না। প্রতিমন্ত্রী নিজে নির্বাচনের সময় এলাকায় থাকতে পারেন কি? তিনি সারা রাত নেতা-কর্মীদের ডেকে ডেকে কথা বলছেন। এটা নির্বাচনে হস্তক্ষেপের শামিল।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুস সামাদ বলেন, তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। তাঁকে কেউই সমর্থন দেননি। পুঠিয়ার মানুষের সমর্থনে তিনি নির্বাচনে আছেন। ওই প্রার্থী মিথ্যাচার করছেন। তিনি উল্টো তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারণায় আগ্রাসী কথাবার্তা বলছেন।
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী মো. বদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিমন্ত্রী গতকাল রাতে সরকারি সফরে রাজশাহীতে এসেছেন। তিনি সাধারণত এলাকায় এলে নিজের বাড়িতে রাতযাপন করেন। আজ তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও সার্কিট হাউসের অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন। তিনি কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেননি।
পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এ কে এম নূর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কল্যাণ চৌধুরীর কাছে তিনি অভিযোগটি পাঠিয়েছেন।