বগুড়ায় কোন চালের দাম কত, ঠিক করে দিল প্রশাসন

বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে নানা ধরনের চালফাইল ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ায় মিলগেট, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে চালকলমালিক, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বগুড়ায় মিলগেট পর্যায়ে সরু চাল ৬২, পাইকারি পর্যায়ে ৬৩ ও খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৬৪-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে।

সভা শেষে সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে আমন চালের যৌক্তিক দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা থেকেই এ দাম কার্যকর হবে।

জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মিনিকেট চাল মিলগেটে ৬২, পাইকারি পর্যায়ে ৬৩ ও খুচরা পর্যায়ে ৬৪ টাকা দরে বিক্রি হবে। এ ছাড়া ব্রি-২৮ জাতের চাল মিলগেটে ৫২, পাইকারি পর্যায়ে ৫৩ এবং খুচরা পর্যায়ে ৫৪-৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। স্বর্ণা-৫ মিলগেটে ৪৬, পাইকারি পর্যায়ে ৪৭ ও খুচরা পর্যায়ে ৪৮-৪৯ টাকা কেজিতে বিক্রি হবে। চিনিগুঁড়া সুগন্ধি চাল খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, জেলায় ধান ও চালের কোনো সংকট নেই। সংকটের গুজব রটিয়ে সরকারকে বিব্রত করলে বা কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চালের বাজার কেউ যাতে অস্থিতিশীল করে তুলতে না পারেন, সে জন্য ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা সিদ্ধান্ত মানবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে চালকলমালিক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করে জেলা প্রশাসন। সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মেহবাউল করীম, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভীনসহ জেলার চালকলমালিক, আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি বগুড়া জেলার সভাপতি এ টি এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘চালের দাম মিল, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে জেলা প্রশাসন থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে ধানের দাম বাড়লে এই দরে চাল বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে।’

বগুড়ায় মিলগেট, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রশাসন। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে
ছবি: প্রথম আলো

বাজার পরিস্থিতি
উত্তরের চালের বড় মোকাম বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া বাজারে মঙ্গলবার প্রতি কেজি কাটারিভোগ চাল পাইকারি পর্যায়ে ৬৮, ব্রি-৪৯ জাতের চাল ৫২, জিরাশাইল চাল ৬০ ও ব্রি-৫১ জাতের চাল ৪৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে একই মোকামে প্রতি কেজি কাটারিভোগ ৭০, ব্রি-৪৯ জাতের চাল ৫৪, জিরাশাইল ৬২ ও ব্রি-৫১ জাতের চাল ৫১ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় বর্তমানে ১১টি অটোরাইস মিল, পাঁচ শতাধিক সেমি অটোরাইস মিল ও প্রায় দুই হাজার হাস্কিং মিল আছে। শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর বাজারে আজ পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি কাটারিভোগ চাল ৬৪, স্বর্ণা-৫ জাতের মোটা চাল ৪৫, ব্রি-৪২ ও ব্রি-৫১ জাতের চাল ৫১, ব্রি-৪৯ জাতের চাল ৪৭ এবং সুগন্ধি চাল প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

মির্জাপুর বাজারের খুচরা চালের দোকান ‘মেসার্স ইমু ট্রেডার্স’, ‘মেসার্স সততা চাউল ঘর’ ও ‘মেসার্স ভাই ভাই চাউল কল’ নামে তিনটি দোকানে বিকেলে প্রতি কেজি কাটারিভোগ ৬৭, স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৪৬, ব্রি-৪২ ও ৫১ জাতের চাল ৪৮, ব্রি-৪৯ জাতের চাল ৫০ ও চিনিগুঁড়া চাল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ইমু ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ইয়াকুব আলী বলেন, পাইকারি দরের তুলনায় খুচরায় কেজিতে সর্বোচ্চ ২ টাকা বেশি দরে চাল বিক্রি করা হচ্ছে।

বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আমন ধান-চালের মজুতবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত জেলার শ খানেক চালকল, গুদাম ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে দর নির্ধারণ করে দেওয়ার পাশাপাশি মজুতবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।